ঢাকা, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫২ অপরাহ্ন
কওমি মাদ্রাসার একক কর্তৃত্ব হারাচ্ছে হেফাজত
Reporter Name

দেশজুড়ে তাণ্ডবের পর ব্যাপক সমালোচিত হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটিকে যেকোনো সময় ভেঙে দেওয়া হতে পারে। সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য কাউকে নেতৃত্বে আনার পাশাপাশি কওমি মাদরাসার ওপর থেকে দলটির একক কর্তৃত্ব বন্ধের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।

নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, কওমি মাদরাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সব সিদ্ধান্ত নেবে নির্ধারিত বোর্ড ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’। মাদরাসা পরিচালনায় কোনোধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না হেফাজতে ইসলাম।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারত সফরকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ধারাবাহিক সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। দলটির সবচেয়ে আলোচিত যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ এর মধ্যে অন্তত শীর্ষ ৯ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ অবস্থায় সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে উল্টো সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চাচ্ছে দলটি। তবে দেশজুড়ে সহিংসতায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বর্তমানে চলতে থাকা টানা গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্যে সোমবার (১৯ এপ্রিল) দিনগত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এ সময় তারা দলের নেতাদের গ্রেপ্তার হয়রানি বন্ধ করার অনুরোধ জানায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধের অনুরোধ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজতের নেতৃবৃন্দকে জানান, কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, যারা সহিংসতায় জড়িত ছিলেন তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দলটির পক্ষ থেকে সমঝোতার প্রস্তাব দিলে মন্ত্রীর কোনো আশ্বাস না পেয়ে ফিরে আসেন তারা।

এদিকে হেফাজত নেতারা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে হেফাজত নেতারা সম্প্রতি নিজেদের সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর তাণ্ডবের কোনো দায় নিতে চাননি। তবে যাই হোক তারা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু দলটির সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক দলের দিকে মোড় নেয়। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ হেফাজতের কমিটিতে যুক্ত হতে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে নতুন নেতৃবৃন্দ সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

এ অবস্থায় হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটি যেকোন সময় ভেঙে দেওয়া হতে পারে। নেতৃত্বে এমন একজন ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে যিনি সব মহলে গ্রহণযোগ্য এবং আল্লামা শফীর অনুসারি। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে থাকতে পারবেন না, তাদের অবশ্যই হেফাজতের পদ ছাড়তে হবে।

এমনকি কওমি মাদরাসা কিভাবে পরিচালিত হবে তা নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট বোর্ড, যেখানে হেফাজতে ইসলাম কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কওমি মাদরাসা পরিচালনার সব সিদ্ধান্তই নেবে বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে এসে হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন এর মধ্যে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। সহিংসতার ঘটনায় দেশজুড়ে এখন বিভিন্ন মামলায় ৪৭০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চলমান আছে।

রবিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার মামুনুল সাত দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বেরিয়ে আসছে সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের তথ্য।

সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনা ছিল হেফাজতে ইসলামের। এ হীন উদ্দেশে কওমি মাদরাসার কোমলমতি ছাত্রদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছিল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। হেফাজতের নেতাকর্মীদের উসকানি দিতেন তিনি। মামুনুল ভেবেছিলেন, সরকার পতন হলে হেফাজতের সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।

এদিকে এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৩টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জে তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মামুনুলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। মামুনুল অন্য একটি মামলায় বর্তমানে রিমান্ডে আছেন। সেটি শেষ হলে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করবে। সূত্র

4 responses to “কওমি মাদ্রাসার একক কর্তৃত্ব হারাচ্ছে হেফাজত”

  1. … [Trackback]

    […] Read More here to that Topic: doinikdak.com/news/8396 […]

  2. … [Trackback]

    […] Here you can find 9184 more Info to that Topic: doinikdak.com/news/8396 […]

  3. 뉴토끼 says:

    … [Trackback]

    […] Find More on on that Topic: doinikdak.com/news/8396 […]

  4. … [Trackback]

    […] Info on that Topic: doinikdak.com/news/8396 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x