২০০০ সালের দিকের কথা। বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও। আমাদের গ্রামে একমাত্র সাদাকালো টিভি ছিল কেরানীর বাড়িতে। টিভি দেখার জন্য আমাদের পাড়ি দিতে হত একটি সাঁকো এরপরে বিশাল বাগান তারপরে বিল। বর্ষায় খাল বিল বাগানে পানি ছিল ভরপুর। শুকনো মৌসুমে পানি না থাকার কারনে খাল দিয়ে নেমে সহজে যেতে পারতাম। বর্ষা আসলে আমার মন খারাপ থাকত ছোট থাকার কারনে সাঁকো পার হতে পারতাম না। বাড়ির বড়দের পেলে সুযোগ মিলতো শুক্রবারের সিনেমা দেখার, আর তাদের না পেলে যাওয়া হত না। একদিন বাড়ির সবাই আমাকে রেখেই সিনেমা দেখতে চলে যায়। আমি সাঁকোর কাছে এসে ওপারে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস নিতে থাকলাম। সাঁকো পার হওয়ার একবার সাহস করলেও তিন বার পিছিয়ে যাচ্ছি ! সর্বশেষ সাহস করে উঠে গেলাম এবং পারও হলাম। সত্যি বলতে সেদিন আমার সিনেমা দেখার আনন্দের চেয়ে সাঁকো পার হওয়ার আনন্দটা বেশি ছিল। বিশ্বাসই হচ্ছিল না আমি সাঁকো পার হয়েছি ! এবং এক দৌড়ে খোরশেদ ভাইর বাড়িতে।
টিভির ঘরটি থাকত হাউসফুল। যাদের ঘরে বসার সুযোগ হত না তারা দরজা জানালা দিয়ে দেখত। সিনেমায় আর একটি বিরম্ভনা ছিল বিজ্ঞাপন। এত এত বিজ্ঞাপন দিত দেখতে খুবই বিরক্ত লাগত।
আবার কোন সপ্তাহে যদি ব্যাটারিতে চার্জ না থাকত সেই সপ্তাহে সিনেমার মাঝে বিজ্ঞাপনের সময় টিভির জ্যাক খুলে খুলে চালাত যাতে সিনেমা পুরটা শেষ করা যায়। আবার অনেক সময় টিভি ক্লিয়ার করার জন্য ঘুরাতে হত এন্টিনার।
সপ্তাহে শুক্রবার সিনেমা দেখার জন্য বাসার কাজগুলো আগে আগেই করে রাখতাম। যাতে আব্বা শুক্রবারে আর কোন কাজের কথা না বলে। নামাজ পড়ে এসে ভাত খেয়ে টিভি দেখার ফন্দি ফিকির করে বেড়িয়ে যেতাম। আর এদিকে মা ভাত খেতেই বলত খেয়ে ঘুমাতে আস।
মা’র কথা এ কান দিয়ে ঠুকিয়ে ওকান দিয়ে বের করে দিতাম। আব্বা ভাত খেয়ে শুইলে আমিও চম্পট!
দিনে না ঘুমানোর কারনে রাত ১০ টা বাজার আগেই পড়ার টেবিলে জুরতাম। কিছুক্ষণ পর পরই আব্বা বকাঝকা করত। রাতের ঘুমের নেশায় চোখ আর টেনে তুলতে পারতাম না। টেবিলে বইয়ের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে যেতাম। এভাবেই শেষ হত সপ্তাহের শুক্রবারের সাদাকালো সিনেমার দেখার ছেলেবেলার গল্প।
… [Trackback]
[…] Find More Info here to that Topic: doinikdak.com/news/31783 […]
… [Trackback]
[…] Read More on that Topic: doinikdak.com/news/31783 […]
… [Trackback]
[…] Read More to that Topic: doinikdak.com/news/31783 […]