রুহুল আমিন, আত্রাই, (নওগাঁ) সংবাদদাতাঃ নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ব্রজপুর গ্রামে মানষিক ভারসাম্যহীন চার ছেলে-মেয়ের পাবনা মানষিক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
গত ২২ মে শনিবার কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ৪ ভাই-বোন মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ১০ বছর ধরে শিকলে বন্দি সংবাদটি প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজড়ে আসে উপজেলা প্রশাসনের। এরপরই ওই দিন সন্ধ্যায় খোঁজ নেন এবং মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে অসুস্থ ছেলে-মেয়েদের কাছে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোকসানা হ্যাপি এবং সমাজসেবা অফিসার সাইফুল ইসলাম। পরিবার, প্রতিবেশি ও ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পোষাক এবং খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মানুষের মানবাধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ মে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে জানতে পেরে ব্রজপুর গ্রামে গিয়ে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পাই। পরে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ স্যারের নির্দেশ ও সহায়তায় এবং পাবনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(উপ-সচিব) মোখলেছুর রহমান স্যারের ঐকান্তিক সহযোগিতায় গতকাল ২৫ মে পাবনা মানসিক হাসপাতালে তাদের ৪ জনকে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে পেরেছি।
তিনি আরো জানান, তাদের বাবা-মার বয়স্ক ভাতা এবং আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জায়গা আছে ঘড় নাই এর আওতায় ঘর দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।উল্লেখ্য, এক সময় পাঁচ ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিলো নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের লবা প্রামানিকের। বর্তমানে পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে-মেয়ে পাগল হয়ে দীর্ঘ দশ বছর ধরে শিকল বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে। এদিকে সুস্থ অন্য এক ছেলে পাগল হওয়ার ভয়ে বাড়ীর ভিটা ছেড়ে অন্যত্র স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। এক মেয়ে বিয়ে হয়ে এখনও স্বামীর বাড়ীতে সুস্থ আছে। প্রতিবেশিরা মাঝে মধ্যে তাদেরও পাগলামীর কথা শুনতে পান বলে জানান। অভাবী বৃদ্ধ বাবা-মা সহায় সম্বল হারিয়ে সময়মতো খেতে দিতে পারেন না অসুস্থ সন্তানদের। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে শিকলে বন্দি করে রেখেছে তাদের।
বৃদ্ধ লবা প্রামানিক এর কপালে এখনও জোটেনি বয়স্ক ভাতা। তিনিও সময় সময় বয়সের ভারে পাগলামি করে থাকেন। লবার স্ত্রী রাইজান মানুষের বাড়ীতে কাজ করে কখনো চেয়ে চিন্তে স্বামী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। সরকারী সহায়তা বলতে শুধুমাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয়ের কার্ড আছে তাদের। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পড়ে বাঁচতে এবং অসুস্থ সন্তানদের চিকিৎসা করাতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে আকুতি জানান অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রজপুর বাজার সংলগ্ন ব্রজপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশদিয়ে বয়ে চলেছে গ্রামীন রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে কিছুদুর যেতেই পাকা একটি বাড়ী। বাড়িটির গলি দিয়ে পশ্চিম দিকে কয়েক ধাপ দিতেই হাতের ডানপার্শ্বে চোখে পড়বে দরজা-জানালা বিহীন ভাঙ্গা বাড়ী। ব্রজপুর বাজারে গিয়ে লবা প্রামানিকের বাড়ীর ঠিকানা জানতে চাইলে রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে ঐ বাড়ীতে অনেকগুলো পাগল আছে বলে জানান তারা। বাড়ী তো নয় যেনো ভাঙ্গা পাখির বাসা। বাড়ীর ভেতরে তাকাতেই চোখে পড়বে উঠানে বাঁসের খুঁটির সাথে শিকলে আটকানো আছে মাঝ বয়সী নার্গিস নামে অসুস্থ মেয়ে। অনুরুপভাবে পশ্চিম ভিটায় দরজা-জানালা বিহিন মাটির কুঁড়ে ঘড়ের খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে মাঝ বয়সের সাইফুল নামে অসুস্থ ছেলে।
আবার সেখান হতে পূর্ব দিকে তাকাতেই ভাঙ্গা চালার নিচে চোখে পড়বে শিকল বন্দী মাঝ বয়সী রোজিনা নামে অসুস্থ মেয়ে। সম্পর্কে এরা আপন তিন ভাই-বোন। এদের বিয়ে-সন্তান সবই হয়েছিল। তাদের সন্তানেরা কেহ নানার বাড়ী কেহ দাদার বাড়ীতে বড় হচ্ছে বলে জানায় প্রতিবেশি সাজ্জাদ আলী। এক সময় পরিবারের লোকজন তাবিজ-কবজ এবং কবিরাজি করতো। বাড়ীর ভিটা এবং সন্তানের উপর কবিরাজির প্রভাব পরেছে বলে অনেকে মনে করেন। একারনে এলাকায় পাগলের বাড়ী নামে পরিচিত তারা।