ঢাকা, রবিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
পুরস্কৃত হলেন নবীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম
Reporter Name
"জাহির হত্যা মামলার লোমহর্ষক তথ্য উদঘাটন করায় পুরস্কৃত হলেন নবীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন ৯নং বাউশা ইউনিয়নের দেবপাড়া (বাঁশডর) গ্রামের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিজনা নদীর জল মহাল সহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিরোধ ছিল। নবীগঞ্জ থানা পুলিশ, বাহুবল সার্কেল স্যারের নির্দেশনায় বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও পুরোপুরি নিষ্পত্তি করতে পারেনি শুধু উভয় গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার এর কারণে।

গত ১৫/০৭/২০২০খ্রিঃ তারিখ দিবাগত রাতে নবীগঞ্জ থানায় সংবাদ আসে যে আগামীকাল সকালে বিজনা নদীর লিজকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ স্যারের নির্দেশনায় নবীগঞ্জ সার্কেল স্যারের নেতৃত্ত্বে নবীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশের টীম ঐদিন খুব সকালেই বাশডর গ্রামে অবস্থান নেয় এবং দাংগা যাতে সংঘটিত না হয় সে লক্ষে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে পুলিশ থানায় চলে আসে।

থানায় পৌঁছার পর পরই খবর আসে যে উভয় পক্ষের মধ্যে দাংগা হচ্ছে তখন দ্রুত পুলিশ আবার বাশডর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

পথিমধ্যেই খবর আসে জাহের আলী (৭৫) নামের একজন বৃদ্ধ লোক প্রতিপক্ষের ফিকলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছে।নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে দাংগা থেমে গেছে তবে ভিকটিম জাহের আলীর বাড়িতে প্রচুর লোকজন জমায়েত হয়ে আছে।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিমের রক্তমাখা জামা ও ভিকটিম এর মৃতদেহ যে খাটে পড়েছিল তার নিচ থেকে ফিকলের রক্তমাখা সুচালো অগ্রভাগের অংশ উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দ করে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঐদিনই পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ মহোদয়, বাহুবল সার্কেল মহোদয়দ্বয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

১৭/০৭/২০২০খ্রিঃ তারিখে ভিকটিমের বড় ছেলে আরশ আলী বাদী হইয়া প্রতিপক্ষের ৯২ জন সহ অজ্ঞাতনামা লোককে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দেয়া হয় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)  আমিনুল ইসলামকে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম, পিপিএম  স্যারের সার্বিক নির্দেশনায় এবং নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেল স্যারের নেতৃত্বে হত্যা মামলাটির প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে টীম নবীগঞ্জ ও তদন্তকারী অফিসারের তদন্তে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,ভিকটিম জাহের আলী(৭৫) উভয় পক্ষের দাঙ্গা চলাকালীন সময়ে ঘটনাস্থলেই ছিলনা। সে পান বিক্রির জন্য গ্রামের অদূরে পশ্চিমহাটিতে গিয়েছিল।দাঙ্গা শেষ হওয়ার প্রায় আধা ঘন্টাখানেক পর সে বাড়িতে এসে তার বাড়ীর ভিতরের কক্ষে খাটে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। গত ২২/০৪/২০২১ তারিখে বাদীপক্ষের একই গোষ্ঠীর লোক মিছবাহ উদ্দীনকে গ্রেফতারের পর তাহাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে জাহের আলীকে ফিকল দিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনাটি অকপটে স্বীকার করে এবং জানায় যে জাহের আলীর(৭৫) নিজের বড় ছেলে আরশ আলী তাহার দায়েরকৃত হত্যা মামলার সাক্ষী দের নিয়ে তাহার পিতার হত্যার পরিকল্পনা করে শুধুমাত্র নিজেদের গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষকে ফাসাতে!!!

মৃত জাহের আলীর বড় ছেলে আরশ আলীর নেতৃত্বে সে সহ আরও ৫ জন খাটে শয়নরত জাহের আলীর পেটে ফিকল ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে সে নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে।

পরে আসামী মিছবাহ উদ্দিনকে ধৃত করার পর তাহার দেওয়া তথ্য মোতাবেক শামছুল মিয়া ও জিলু মিয়াদেরকে গ্রেফতার করে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা প্র্ত্যেকেই নিজের দোষ স্বীকার করতঃ বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রাদান করে।

দীর্ঘ বন্ধুর পথ পেরিয়ে সেই সাফল্যের জন্য ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ অদ্য ০৮/০৫/২০২১খ্রিঃ তারিখ তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, পুঃপঃ(তদন্ত), নবীগঞ্জ থানা কে পুরস্কার প্রদান করেন মাননীয় পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ স্যার, সাথে নেতৃত্বদানকারী বাহুবল সার্কেল পারভেজ আলম স্যার।

x