ঢাকা,রবিবার ০৪ জুলাই ২০২১, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
রূপগঞ্জ কারখানা ট্রাজেডি: আগুনে পুড়ে যাওয়ায় মরদেহ শনাক্ত করতে এক মাস লাগতে পারে
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মাকসুদ জানান মরদেহগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় পুড়ে যাওয়ার কারণে পরিচয় শনাক্তে এত দেরি হতে।

তিনি বলেন, “লাশগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে কোনো লাশই স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।”

স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো মরদেহ যেই পদ্ধতিতে ডিএনএ নমুনার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়, অতিরিক্ত পুড়ে যাওয়ায় এই মরদেহগুলো থেকে অন্য পদ্ধতিতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানান মি. মাকসুদ।

“স্বাভাবিক মৃত্যু হলে লাশে রক্ত, চামড়াসহ বিভিন্ন অংশ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু এই লাশগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে হাড় ছাড়া অন্য কোনো অংশ থেকে নমুনা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

“হাড় থেকে ডিএনএ নমুনা নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করা তুলনামূলক জটিল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া”, বলেন ডা. মাকসুদ।

তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৮টি মরদেহ আনা হয়েছিল।

এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৫টি মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং ৫টি মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে পাঠায়।

ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

রূপগঞ্জে কারখানায় দুর্ঘটনার পর নিখোঁজদের সন্ধানে গত তিনদিনই হাসপাতালগুলোর সামনে স্বজনদের ভিড় দেখা যায়।

১১ বছর বয়সী ভাগনের খোঁজে গত দুই দিন হাসপাতাল আর কারখানায় ছোটাছুটি করেছেন লাইজু বেগম। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, “আগুন কত বড়, সেটা দেখার পর ধারণা করি যে আমার ভাগনে মনে হয় মারা গেছে।”

“এখন দুইদিন ধরে হাসপাতালে, কারখানায় ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছি। ভাগনের কোনো রকম খবর যদি পাই।”

পনের-বছর বয়সী মেয়ের ছবি নিয়ে হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষারত থাকা চান্দু মিয়াও গত দু’দিন ধরে হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছেন। লাইজু বেগমের মত তারও আশঙ্কা যে তার কন্যা মারা গেছে।

নিখোঁজদের নিকট আত্মীয়দের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ একটি সেল তৈরি করেছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হলেও ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, “নিখোঁজের সংখ্যা কত তা চূড়ান্তভাবে আমরা এখনই জানাচ্ছি না। কারণ এমন হতে পারে যে একই ব্যক্তির জন্য একাধিক স্বজন খোঁজ করছেন, এরকম ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

তবে মি. আলমের অনুমান, যে ৫২ জন মারা গেছেন, তাদের বাইরে আলাদা করে কেউ নিখোঁজ নেই। যেহেতু মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে মৃত হিসেবে দাবি করা যাচ্ছে না এবং তাদের ‘নিখোঁজ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তা জায়েদুল আলম আশা প্রকাশ করেন শীঘ্রই নিখোঁজদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে পারবেন তারা।

“আজ দুপুর পর্যন্ত ৪০ জন ভুক্তভোগীর আত্মীয়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের সেল স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে ভুক্তভোগীদের আত্মীয় স্বজনরা এসে নমুনা দিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x