বিশ্ব জগতের প্রতিপালক, জীবন মৃত্যুর মালিক মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের এক অনন্য মাধ্যম তাহাজ্জুদের নামাজ। সাধারণভাবে তাহাজ্জুদ বলতে আমরা কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর জাগ্রত হয়ে যে নামাজ আদায় করি সেটিই তাহাজ্জুদ হিসেবে আখ্যায়িত। এসময় একনিষ্ঠ মুমিনগণ বিছানা ও নিদ্রা ত্যাগ করে মালিকুল আমলাক, সমস্ত মানুষের রিজিকদাতা, রাজাধিরাজ মহান প্রতিপালকের দরবারে দাঁড়িয়ে যায়।
উল্লেখ্য, প্রাক ইসলামী যুগে তাহাজ্জুদের বিধান ছিলো ফরজ। পরবর্তীকালে এই বিধানটি বিলোপ হয়ে যায়। অধিকাংশ ফকিহগণের মতে, তাহাজ্জুদের নামাজ নফলের অন্তর্ভুক্ত। তবে নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এই নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন।
রমজানে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার গুরুত্ব অশেষ। আবার যেহেতু মুমিনগণ সাহরী খাওয়ার জন্য রাতে উঠতে হয় সেজন্য এই নামাজ আদায়ের বিশেষ সুযোগও রয়েছে। দোজাহানের বাদশাহ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত।[সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮১২]
হাদিসের সবথেকে বিশুদ্ধ ছয়টি গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম দুটি গ্রন্থ আবু দাউদ ও নাসাঈ। এ দুটি গ্রন্থে নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল করেন, যে ব্যক্তি রাতে নিদ্রা থেকে জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন এবং তার স্ত্রীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দেন। এরপর তিনি ও তার স্ত্রী তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করেন। এমনকি যদি তিনি অর্থাৎ স্ত্রী ঘুম থেকে জাগ্রত হতে না চান, তবে তার মুখে যেন পানি ছিটিয়ে দেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বিনা ওজরে কখনো তাহাজ্জুদের নামাজ ছাড়তেন না।কেননা এসময় মহান আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং মুমিনের কর্মকাণ্ড শোনেন। আল্লাহ এবিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে উদ্যেশ্য করে পবিত্র কুরআনে বলেন, রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবেন, এটি আপনার অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রশংসিত স্থানে(মাকামে মাহমুদে) প্রতিষ্ঠিত করবেন।
শুরুতেই বলেছি তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার এক অসাধারণ মাধ্যম। অপর হাদিসে সুপথের দিশারী, মানবতার মুক্তির মহান বাতিঘর নবী করীম (সা.) বলেন, মুসলিমদের মধ্যে পবিত্র কুরআনে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি বিরাট সম্মানের অধিকারী হবেন।
তাহাজ্জুদের বিষয়ে আসাদুল্লাহ তথা আল্লাহর সিংহ হযরত আলী (রা.) বলেছেন, ইবাদতে যারাই আধ্যাত্মিক জগতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছেন, তাঁরাই রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েছেন। [দিওয়ানে আলী]
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আমরা যেন রমজানের প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহিমান্বিত, রহমত, বরকত ও নাযাতের এই সময়টাতে জান্নাতের পথ সুগম করতে পারি। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে কবুল করুন। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগুল মুবিন। আমীন নিউজ সোর্সঃ রমজান: তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত