এছাড়াও এই প্রকল্পে ১১টি সেতু ও কালভার্টে কোনো সংযোগ সড়ক দেয়া হয়নি। ফলে উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ যোগাযোগ বঞ্চিত। দিরাই শাল্লা আঞ্চলিক সড়কের সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নির্মাণকাজের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১২০ কোটি টাকা। হাওড়ের বুকে মাটি ভরাট, সড়ক নির্মাণ, বিভিন্ন পয়েন্টে সেতুসহ পুরো সড়কটি পাকা করার কথা থাকলেও কাজ শেষ করতে পারেনি সওজ। কাজ অসমাপ্ত রেখে ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ১২০ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয় প্রায় ৯৯ কোটি টাকা। অসমাপ্ত এ সড়ক এলাকাবাসীর কোনো কাজেই লাগেনি। এবার সড়কটি উন্নয়নে নতুন আরেকটি প্রকল্প নিতে চাইছে সওজ। জানা গেছে, ২০১০ সালে সুনামগঞ্জ সফরে গিয়ে দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছরই হাওড়ের বুকে মাটি ভরাট করে শুরু হয় সড়কটির নির্মাণকাজ। শুরু থেকেই ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হতে থাকে প্রকল্পটি। ২০১৭ সালে যখন অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ বলে ঘোষণা দেয়া হয়, তখনো মাটির কাজ ১৫ শতাংশের মতো বাকি ছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা থেকে সড়কটিকে সুরক্ষা দিতে ব্লক ফেলা হয় যেনতেনভাবে। ১১টি সেতু-কালভার্ট বানানো হলেও সেগুলোর সঙ্গে সড়কটিকে যুক্ত করা হয়নি। পিচ ঢালাইয়ের কাজও অসমাপ্তই থেকে গিয়েছে। কোনো কোনো স্থানে মাটি ভরাট করেই শেষ করে দেয়া হয় নির্মাণকাজ। পাঁচ বছরে ৯৯ কোটি টাকা খরচ করেও সড়কটিকে ব্যবহার উপযোগী করা যায়নি। মাটি ভরাট করে যেটুকু সড়ক অবকাঠামো দাঁড় করানো হয়েছিল পরপর তিন বছরের বন্যায় তাও বিলীন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, সড়কে যেটুকু মাটি ছিল তাও আবার ২০২০ সালের বন্যায় ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হরেন্দ্র দাস বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত শাল্লায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। দিরাই শাল্লা সড়কের কাজ শুরু দেখে কিছুটা আশার সঞ্চার জেগেছিল আমাদের মনে। দিরাই শাল্লা এই সড়কের জন্য আমরা এখনো অন্ধকার জগতেই রয়েছি।
ধামপুর গ্রামের বকুল আহমেদ বলেন, ভোট আসলেই আমাদেরকে আশ্বাস দেয়া হয় রাস্তাঘাট করা হবে। কিন্তু ভোট চলে গেলেই এগুলো কথা মনে থাকে না। ২০১৭ সালে উপ নির্বাচনের সময় এমপি জয়াসেন শাহীদ আলী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘোষনা দিয়েছিলেন দিরাই শাল্লার উন্নয়নে স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন তিনি। উপনির্বাচনের পর পুনরায় তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু আজও পর্যন্ত শাল্লায় কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
স্থানীয় এমপি(দিরাই শাল্লা-২) ড. জয়াসেন গুপ্তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। কারন উনি ফোন রিসিভ করেননি। বিষয়ে শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, দিরাই শাল্লা সড়ক আমাদের স্বপ্নের সড়ক। এই সড়কটির কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য এমপি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করা হবে। তবে আশা করছি অচিরেই একনেকে দিরাই শাল্লা সড়কের প্রকল্প অনুমোদন পাবে।
এবিষয়ে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের বন্যায় দিরাই-শাল্লা সংশ্লিষ্ট সড়ক বাঁধের বেশকিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। ফলে দিরাই উপজেলার সঙ্গে শাল্লার যোগাযোগ হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সড়কটির পেভমেন্ট পূননির্মাণ করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত সড়কটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে ও তা স্থানীয়দের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।#