স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের নামে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এরমধ্যে বায়তুল মোকাররম এলাকায় শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মোদী বিরোধী শ্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ ও পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শুরু হয় এই সংঘর্ষ। এতে চ্যানেল আইয়ের রিপোর্টার শাকের আদনানসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজ শেষে কর্মসূচী হতে পারে এমন তথ্য আগে থেকেই ছিল গোয়েন্দা ও পুলিশের কাছে। আর এজন্যই নামাজ শুরুর আগেই পুরো এলাকায় ছিল বাড়তি নিরাপত্তা। নামাজ শেষে একদল মুসল্লী মোদী বিরোধী শ্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। এখান থেকেই সূত্রপাত হয় সংঘর্ষের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে।
বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে এর জবাব দেয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা মজজিদে অবস্থানি নিয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অনেকেরই আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বেলা আড়াইটার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। আসরের নামাজের পর গুলিস্তানের দিক থেকে জিপিও মোড়ের দিকে রাষ্ট্রপতির গাড়ি বহর গেলে আবারও মসজিদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। তবে পুলিশ তা প্রতিহত করে।
বেলা দু’টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ থেমে থেমে চলে সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত। সাড়ে পাঁচটার দিকে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
একই ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। জুমার নামাজ শেষে হাটহাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসা ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি মসজিদ থেকে এ মিছিল বের করে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হেফাজতের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে হাটহাজারী থানার দিকে এগুতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ প্রথমে টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় একজন এএসপি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একই ঘটনার জেরে রেলস্টেশনে হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এছাড়া তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভাঙচুর করেছে।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় শহরের প্রধান সড়ক টিএ রোডে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করে। এসময় প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে তারা টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে রেলস্টেশনে বিক্ষোভ করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এসময় রেলস্টেশনের সিগন্যাল, মাস্টার রুম, কন্ট্রোল রুম অন্যান্য কর্মকর্তাদের কক্ষ ব্যাপক ভাঙচুর করে। সিগন্যাল বক্স ভেঙে ফেলায় ঢাকার সাথে সিলেট ও চট্টগ্রামের সাথে সকল প্রকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রবেশ করার সময় বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করলে ট্রেনটি ফিরে যায়।
এছাড়া জেলা পরিষদ কার্যালয়ে বিকেল সোয়া ৫টায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়। শহরের কাউতলী, ভাদুঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। সড়কে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় অবরোধ করে তারা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর, নন্দনপুর, মজলিশপুর, ঘাটুরাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার সকল যানবাহন বন্ধ রয়েছে।
নিউজ সোর্সঃ ঢাকা, হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ