ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন
রহমত ও শান্তির মাসকে অশান্ত করা হচ্ছে: জুনায়েদ আল হাবীব
Reporter Name

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, ঢাকা মহানগর সভাপতি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব বলেছেন, আলেমদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রহমত ও শান্তির মাস রমজানকে অশান্ত করা হচ্ছে।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। ২০১০ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের হামলা, ভাংচুর, বিশৃঙ্খলা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের কর্মকাণ্ড চালায়নি। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম দেশের ইতিহাসে দেশব্যাপী সর্ববৃহৎ কর্মসূচি পালন করেছে ৷

কেন্দ্রীয় ভাবে বিশাল লংমার্চ ও পরবর্তী ঢাকা অবরোধ- যা প্রতিহত করার জন্য বামপন্থী, রামপন্থী, কমিউনিস্ট, নাস্তিক মুরতাদ ও ইসলাম বিরোধী সকলে মিলে হরতাল আহ্বান করেছিল। সরকার ও প্রসাশনের পক্ষ থেকে সেই হরতালকে সমর্থন করে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। দেশপ্রেমিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অনেকেই তখন প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পাঁয়ে হেঁটে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন।

রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে মুসলমানদের ঢাকায় আসতে বাধা প্রদান করা হয়। যার ফলে অসংখ্য মানুষ লংমার্চে ও ঢাকা অবরোধে অংশ নিতে পারেনি। ওই সময় যে যেখানে আটকে পড়েছিল সেখানেই জমায়েত হয়ে জেলায় জেলায় সমাবেশ ও মিছিল করেছে। কিন্তু কোথাও একটি রিকশার গায়ে কেউ হাত দিয়েছে বলে প্রমাণ দিতে পারবে না। কোনো জায়গায় সামান্যতম কোনো বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুর হেফাজতে ইসলাম করেনি বলে দাবি করেন আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব।

তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ করে শতশত আলেম উলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে শহীদ করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। কোথাও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়নি।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলে আসছে। কিন্তু একটি গ্রুপ সব সময় হেফাজতের আন্দোলনে বাধা দিতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জ্বালাও-পোড়াও এবং ভয়ঙ্কর রকমের তাণ্ডব চালিয়েছে। অতঃপর সরকারের ছত্রছায়ায় তাদের সেই তাণ্ডবকে ‘হেফাজতের তাণ্ডব’ বলে প্রচার করে আসছে। তারা ‘হেফাজতের তাণ্ডব’ ‘হেফাজতের তাণ্ডব’ বলে জনপ্রিয় সংগঠন হেফাজতের প্রতি মানুষের ঘৃণা সৃষ্টি করার গভীর পাঁয়তারা করছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করে আসছে ৷

খতিবে বাঙ্গালখ্যাত এই আলেম আরো বলেন, গুজরাটে মুসলমান হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী নরেন্দ্র মোদির গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশে আগমনকে হেফাজতে ইসলাম ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং সরকারের কাছে দাবি জানায়, মোদিকে যেন বাংলাদেশে আনা না হয়। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শৃঙ্খলার স্বার্থে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সেদিন কোনো কর্মসূচি ছিল না। এমনকি কোনো ইসলামী দলও সেদিন কোনো কর্মসূচি দেয়নি।

তিনি বলেন, ২৬ মার্চ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু ধর্মপ্রাণ মুসলমান, যারা মোদির আগমনকে মেনে নিতে পারেনি, তারা বাইতুল মোকাররমে জুমার নামাজের পর মোদির আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু মিছিলকারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর অস্ত্রশস্ত্রসহ মসজিদের ভেতরেই আক্রমণ চালানো হয় এবং মসজিদের বাইরেও আগে থেকে অবস্থানরত অস্ত্রসহ গুণ্ডাবাহিনী মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। তারাই সেদিনের তাণ্ডবের মূল হোতা এবং পরে ২৬, ২৭ ও ২৮ তারিখে বাংলাদেশে যা হয়েছে তার জন্য একমাত্র তারাই দায়ী।

আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, বাইতুল মোকাররমের এই আক্রমণের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, তা সহ্য করতে না পেরে হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে। স্বতঃস্ফূর্ত সেই মানুষগুলোর ওপর পাখির মতো গুলি চালিয়ে তাদের যেভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে তার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ধর্মীয় ও মানবিক কারণে পরবর্তীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও হরতাল কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয় এবং হেফাজতের বিক্ষোভ ও হরতাল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পালিত হয়।

বিবৃতিতে আল্লামা হাবীব আরো বলেন, সে দিন সরকারের ছত্রছায়ায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ যারা বাইতুল মোকাররম, হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তাণ্ডব চালিয়েছে তারাই বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আক্রমণ করে একে একে ১৯ জন ভাইকে শহীদ করেছে ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এই তাণ্ডব তারাই ঘটিয়েছে, তারাই তাণ্ডবের মূল হোতা।

আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব আরো বলেন, এতকিছুর পরও হেফাজতে ইসলাম দেশব্যাপী দোয়া দিবস ও একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে সামনে আর কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। তার কারণ হলো, সামনে রমজান মাস, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস, এবাদত বন্দেগীর মাস। এই মাসে যেন মানুষের কোনো প্রকার অসুবিধা না হয় সে দিকে লক্ষ রেখে কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে লক্ষ করছি হেফাজতে ইসলামের এই সরলতাকে দুর্বলতা ভেবে বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জসহ সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসের কোনো তোয়াক্কা করছেন না সরকার।

তিনি আরো বলেন, গত ১৪ এপ্রিল ইফতারের আগ মুহূর্তে মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে তার বাসার সামনে থেকে নির্মমভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারাবীহের পর মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এভাবে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নারায়ণগঞ্জ জেলার সেক্রেটারি ও মাদানীনগর মাদরাসার শাইখুল হাদীস মাওলানা বশিরুল্লাহ, হেফাজতের সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, হেফাজতের সহকারী প্রচার সম্পাদক মাওলানা শরীফুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ হেফাজত নেতা সোনারগাঁওয়ের মাওলানা মহিউদ্দীন খান, মাওলানা শাহজাহান শিবলী, মাওলানা হাফেজ মোয়াজ্জম হোসেন, মাওলানা অলিউর রহমান, মাওলানা রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা ও মাওলানা ফখরুল ইসলামসহ আরো অনেক নেতাকর্মীকে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে পবিত্র রমজান মাসে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে এবং আতঙ্ক সৃষ্টিকরে রহমত ও শান্তির মাসকে চরম অশান্ত করে তুলেছে ৷

জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, হেফাজতে ইসলামের সরলতাকে দুর্বল ভাবলে ভুল হবে। আমরা অনেক ধৈর্যশীল, ধৈর্য আরো ধরবো, তবে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এই অবস্থা যদি সামনে আরো চলতে থাকে তাহলে হেফাজতে ইসলাম রমজান মাসেই কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, যে সমস্ত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে অনতিবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। অন্যথায় হেফাজতে ইসলাম নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। সর্বস্তরের মুসলিম জনতাকে সাথে নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x