ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
আগামী সপ্তাহে বাড়ছে কেন্দ্র ও টিকা প্রয়োগ
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে টিকার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। টিকার জন্য প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করছেন। এ পর্যন্ত চার কোটির বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ৬০ লাখের বেশি টিকার এসএমএসের অপেক্ষায় আছেন।

টিকা প্রয়োগের চেয়ে নিবন্ধন বেশি হওয়ায় নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া টিকা ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে কিছু জটিলতা। এসব জটিলতা নিরসন ও টিকা গ্রহীতাদের ভোগান্তি কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিবন্ধন করার পর যারা দীর্ঘদিন এসএমএস পাচ্ছেন না তাদের দ্রুত টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রের পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে টিকা প্রয়োগের সংখ্যাও। টিকার মজুত বাড়াতেও চলছে নানা উদ্যোগ। এ সপ্তাহে চীন থেকে আরও ৫০ লাখ টিকা আসছে। এ মাসের মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবে আরও দেড় কোটি ডোজ টিকা।

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমাতে আমরা ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী সপ্তাহ থেকে বাড়ানো হচ্ছে টিকা কেন্দ্র। তাছাড়া বর্তমানে প্রতিটি কেন্দ্রে দৈনিক যে পরিমাণ টিকা দেওয়া হচ্ছে সেই সংখ্যাও বাড়ানো হবে। যারা নিবন্ধন করার পর দীর্ঘদিন এসএমএসের অপেক্ষায় আছেন তাদের দ্রুত টিকার আওতায় আনতেই এ উদ্যোগ। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা নিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ১০ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকার ব্যাপারে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কাদের এ টিকা দেওয়া হবে তা জানানো হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করা হলেও আপাতত একমাত্র চীনই বড় ভরসা। দেশটির সঙ্গে সাত কোটি টিকা কেনার চুক্তি করা হয়েছে। কেনা ও উপহার মিলিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় দুই কোটি সিনোর্ফামের টিকা দেশে এসেছে। এখন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ৫০ লাখ করে টিকা আসবে। গত সপ্তাহে চীন থেকে ৫৪ লাখ টিকার একটি চালান আসে। এছাড়া কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যে ১০ কোটি টিকা আসার কথা রয়েছে সেগুলোও আসবে চীন থেকেই। ভারত থেকে কেনা টিকার বাকি চালান অক্টোবরে আসতে পারে। তবে রাশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে টিকা পাওয়ার যে উদ্যোগ ছিল তা আপাতত আলোর মুখ দেখছে না।

এ মাসে প্রায় দুই কোটি ডোজ টিকা আসছে এমন হিসাব করেই নতুন পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। টিকা প্রাপ্তিতে কিভাবে ভোগান্তি কমানো যায় তা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সবশেষ মঙ্গলবারও এ নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানেই টিকা কেন্দ্র ও প্রয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

শনিবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়াও এমন আভাস দেন। তিনি বলেন, করোনার প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা এ বছরের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা ১০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারব। টিকা প্রয়োগে গতি আনতে প্রয়োজনে টিকা দেওয়ার কেন্দ্র এবং কলেবর আরও বাড়ানো হবে।

৭ ফেব্রুয়ারি দেশে টিকাদান শুরু হয়। ওই দিন ৩০ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। দেশে বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্ম- এ চার কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা এসেছে প্রায় ৪ কোটি। এরমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪০, মডার্নার ৫৫ লাখ, সিনোফার্মের ১ কোটি ৯৯ লাখ ১ হাজার ৩৫০ এবং ফাইজারের ১১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা। মঙ্গলবার পর্যন্ত সবমিলিয়ে টিকা নিয়েছেন ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৫ জন। এরমধ্যে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ ২৪ হাজার ১৮ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৪১ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৭ জন। এখন পর্যন্ত সুরক্ষা অ্যাপ ও পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন ৪ কোটি ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ জন। নিবন্ধন করেও টিকার জন্য অপেক্ষায় আছেন ৬১ লাখ ৬০ হাজার ৭৬২ জন।

এদিকে টিকার এসএমএস নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। শুরুর দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দিষ্ট দিনের জন্য এসএমএস পাঠানো হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট দিনের ২৪ ঘণ্টা আগে এসএমএস পাঠানো হয়। ফলে অনেকে টিকার এসএমএস পেলেও নির্দিষ্ট দিন অন্য জায়গায় থাকায় টিকা দিতে পারছেন না। তারা পরে গেলে অনেক কেন্দ্রেই টিকা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আবার এসএমএস দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও।

নিবন্ধন করার কয়েক দিনের মধ্যে নানা উপায়ে অনেকে এসএমএস পেয়ে টিকা নিচ্ছেন। কিন্তু অনেকে নিবন্ধনের পর মাস পেরিয়ে গেলেও এসএমএস পাচ্ছেন না। আবার অনেক দেশে সিনোফার্মের টিকাকে অনুমোদন দেয়নি। বর্তমানে দেশে প্রথম ডোজের বেশিরভাগই দেওয়া হচ্ছে সিনোর্ফামের টিকা।

ফলে প্রবাসীরা সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার সুযোগ পেয়েও নিচ্ছেন না। মডার্না, ফাইজার কিংবা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য তারা অপেক্ষায় রয়েছেন। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে টিকা না পেয়ে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে টিকা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন প্রবাসীরা। তারা ক্ষোভে বিক্ষোভ করছেন।

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে মানুষ টিকা নিতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু সেই তুলনায় টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চাহিদা বেশি থাকায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তবে সামনে বেশ কিছু টিকা পাওয়া যাবে। টিকা এলে এ সংকট আর থাকবে না। তিনি বলেন, মানুষ যাতে সহজে টিকা পান সেদিকে নজর দিতে হবে। হাসপাতালের পাশাপাশি অস্থায়ীভাবেও টিকা কেন্দ্র করা যেতে পারে।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, করোনা থেকে মুক্তি পেতে সবার মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী টিকার মজুত বাড়ছে না। ফলে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। তবে এ মাসের মধ্যে বড় কয়েকটি চালান আসার কথা রয়েছে। মজুত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা প্রয়োগও বাড়াতে হবে। বর্তমানে যে হারে টিকা দেওয়া হচ্ছে এরচেয়ে বেশি টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। প্রয়োজন লোকবল। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত লোকের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, লোকবল বাড়ানো হলে হাসপাতালে টিকা দিলেও তাতে অন্য মানুষের ভোগান্তি বাড়বে না। তাছাড়া একই কেন্দ্রে একাধিক রোগের টিকা দিলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বরং এক কেন্দ্রে সব ধরনের টিকা পেলে মানুষের ভোগান্তি কমবে। গ্রামাঞ্চলে টিকা কেন্দ্র বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে অস্থায়ী টিকা কেন্দ্র করা যেতে পারে। এতে মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক খরচও কমবে।

টিকা নিয়ে প্রবাসীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে মোশতাক হোসেন বলেন, টিকা নিয়ে আমরা বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির জাঁতাকলে পড়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা অনেক টিকার অনুমোদন দেওয়ার পরও বেশ কিছু দেশ তা স্বীকৃতি দিচ্ছে না। এ সমস্যা শুধু আমাদের নয় আরও অনেক দেশের। কিছু দেশের মুনাফার লোভের বলি হচ্ছেন এরা। এতে শুধু প্রবাসী নন সাধারণ মানুষও ভোগান্তিতে পড়ছেন। তাই এ সংকট নিরসনে সরকারকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

One response to “আগামী সপ্তাহে বাড়ছে কেন্দ্র ও টিকা প্রয়োগ”

  1. Can you be more specific about the content of your enticle? After reading it, I still have some doubts. Hope you can help me. https://accounts.binance.com/en/register?ref=P9L9FQKY

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x