ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
৫০ হাজার গানের গীতিকার আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া!
নজরুল ইসলাম, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ পরিচালিত পাঠচক্রের বন্ধু আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া (৬৫) গান লিখে আনন্দ পান। দীর্ঘ ৫০ বছরের নিভৃত সাধনায় তিনি প্রায় ৫০হাজার গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশাত্মবোধক গান রয়েছে সহস্রাধিক। গান পাগল মানুষ হিসাবে এলাকাবাসীও তাকে সম্মান করেন।

জানা যায়, উপজেলার পাগলা থানাধিন মশাখালী ইউনিয়নের কান্দি গ্রামের মৃত আশরাফ আলী ভূঁইয়ার ছেলে আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া ছোটকাল থেকে রেডিওতে গান শুনতে ভালবাসতেন। ছিলেন অসম্ভব প্রকৃতিপ্রেমী। গ্রামের গাছপালা, চন্দ্র-তারা, পুকুর-নালা, দিগন্ত বিস্মৃত সবুজের সমারোহ তাকে বিমুগ্ধ করে দিত। লেখাপড়ার বাইরের সময়টা তিনি রেডিওতে শোনা গান গুনগুন করে গাইতেন আর বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করতেন। এ ভাবেই আব্দুল কুদ্দুসের কোমল মনে গান ও সুরের মূর্ছনা তৈরি হয়। এক সময় অন্তঃসুরের মোহে আবিষ্ট হয়ে লিখতেও শুরু করেন।

১৯৭০সালে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে গান লেখা শুরু করেন আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া। সেই থেকে অদ্যাবধি চলমান রয়েছে তাঁর গান লেখা। এক দিনের জন্যও থেমে যায়নি গান লেখার তাড়না। জীবনের শত দুঃখ, কষ্ট, সুখ-শান্তি প্রেম-ভালোবাসায় দিন-রাত শুধু লিখেছেন আর লিখেছেন। পরিবারে স্বচ্ছলতা থাকায় ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করেও কোন স্থায়ী চাকরিতে প্রবেশ করেননি। তবে স্থানীয় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। সেই সূত্রে নামের আগে ‘মাস্টার’ যুক্ত হলেও এলাকাবাসী আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়াকে ‘গানের মাস্টার’ বলে সম্মান করেন।

মশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মনির সাথে আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে ‘কুদ্দুস ভাই’ বাড়ি আছেন বলতেই ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। উঠানে চেয়ার টেবিল পেতে দিয়ে আমাদের বসতে বলেন। পরে টেবিলের উপর রাখতে থাকেন আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়ার লেখা গানের খাতার প্যাকেট। এক একটা প্যাকেটে ১০-২০টা খাতা। অসংখ্য প্যাকেটে টেবিল ভরে যায়। গুনে দেখা যায় ৩৪৭ টি গানের খাতা। প্রতিটি খাতায় ১০০-১২০, বা ১৫০টি করে গান রয়েছে। সে হিসাবে তিনি প্রায় ৫০হাজার গান লিখেছেন। গানগুলো প্রচার, প্রকাশ বা সুর করার জন্য কাউকে অনুরোধ না করলেও আবেগ দিয়ে খাতাগুলো তিনি সন্তানের মতোই আগলে রেখেছেন।

আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, লিখেছি মনের তাড়নায়। যা মনে এসেছে তাই লিখেছি। শুরু থেকেই যত্ন করে খাতাগুলো আগলে রেখেছি। মৃত্যুর পর এক সময় হয়তো হারিয়েও যাবে। কখনো কাউকে বলিনি আমার লেখা গানে সুর দিতে বা গাইতে। তবে নেত্রকোনা এলাকায় আমার লেখা প্রায় ২৮টি গান গেয়েছেন বাউল শিল্পী হাবিব সরকার, ঝুমা সরকার, চাঁদনী, সুমন সরকার ও কদম আলী সরকার।

ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মনি বলেন, আব্দুল কুদ্দুসের লেখা গানের মান বিচার আমি করতে পারবো না। তবে তার দৃঢ়তা, একাগ্রতা ও অধ্যবসায়কে আমি শ্রদ্ধা জানাই। গানের সংখ্যাটা আমাকে বিস্মিত করেছে। এক জীবনে একজন মানুষ এত সংখ্যক গান লিখতে পারেন!

উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি আব্দুল হামিদ বাচ্চু বলেন, শুভসংঘ পাঠচক্রের উদ্দেশ্যই তৃণমূল পর্যায়ের মেধাবী, নিভৃতচারী শিল্পী-কবি-সাহিত্যিকদের খুঁজে বের করে একত্রিত করা। পাঠচক্রের নতুন সদস্য বন্ধু আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া তেমনি একজন নিভৃতচারী গীতিকার। টানা ৫০ বছরে তিনি প্রায় ৫০হাজার গান রচনা করেছেন। তার এই আবেগ ও কর্মকে শ্রদ্ধা জানাই।

x