ঢাকা, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
নরসিংদীর নজরপুরে ২.৫ কিলোমিটার রাস্তার অচলাবস্থা
Reporter Name

আসাদুল্লাহ, নরসিংদী সদর: নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের দড়িনবীপুরের ঝাড়তলা মোড় থেকে একটি রাস্তা করিমপুর বাজারকে সংযুক্ত করেছে। রাস্তার আশপাশ ও দুইপ্রান্ত মিলিয়ে মোটামুটি ১১ টি গ্রাম রয়েছে । এসব গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের প্রধান সড়ক ছিল রাস্তাটি।

এ রাস্তা দিয়ে প্রায় সময়ই পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচল করে। নরসিংদী সদর থেকে শেখ হাসিনা সেতু পার হয়ে নজরপুর ইউনিয়নের চেঙ্গাতুলি বাহের চর এবং করিমপুরের লোকজন তাদের গন্তব্যে পৌঁছার প্রধান রাস্তা হিসেবে এটিই ব্যবহার করছে সবসময়। কিন্তু বর্তমানে রাস্তার পিচের ডালাই সরে গিয়েছে , স্থানে স্থানে খানা খন্দে ভরে আছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই রাস্তাটি ব্যবহার করে । রাস্তার উপরে কয়েকটি  পাকা পুল রয়েছে ।পুল গুলি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য। দেখে মনে হয় যে কোন সময় ভেঙে পড়বে। রাস্তায় গর্ত হওয়ায় যেকোনো যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। কখনো মোটর চালিত রিক্সা ,অটো , পণ্যবোঝাই ভ্যান ইত্যাদি উল্টে যাচ্ছে।

ইদানিং বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রী এ রাস্তাটি ব্যবহারে অনিচ্ছুক। এতে করে যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। সময়ও নষ্ট হচ্ছে দ্বিগুন।

রাস্তাটি ঝাড় তলা মোড় থেকে শুরু হয়ে বালুয়াঘাট বাজার পর্যন্ত একটি বিরতি বালুয়াঘাট বাজার হয়ে দিলারপুর থেকে ছগরিয়া পাড়া গ্রামকে যুক্ত করেছে। ছগরিয়া পাড়া , বাহেরচর এবং আলীপুরের সকল লোক এ রাস্তা দিয়েই চলাচল করে।

নজরপুর ও করিমপুর ইউনিয়নে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই নরসিংদী সদরে আসেন। রাস্তাটির অচলাবস্থা তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। চেঙ্গাতলী , করিমপুর, বাহেরচর ছগরিয়া পাড়া ,দিলারপুরের শিক্ষার্থী রাস্তাটি দিয়ে কম খরচে কম সময়ে সদরে আসতে পারত। এখন তাদের সময় ও ভাড়া দুটিই বেশি ব্যয় হচ্ছে।

ভুক্তভোগী গ্রামের শিক্ষার্থীরা বলেন, এখন করোনাকালীন প্রতিষ্ঠান ছুটি। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে সকল প্রতিষ্ঠান খুলে দিবে। আমাদের নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। রাস্তার এমন নাজুক পরিস্থিতির কারনে সময়মত শ্রেণি কক্ষে উপস্থিত হওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরপরই এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এমন ভাঙা রাস্তা দিয়ে পরিক্ষা দিতে গেলেও বিপদ। যদি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হই তাহলে সব যাবে। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি যথাশীঘ্র রাস্তা মেরামতের কাজে মনোযোগ দিতে। এমন অচলাবস্থা আমরা আর দেখতে চায় না।

রাস্তাটিতে নিয়মিত মোটর চালিত রিক্সা চালান জয়নাল মিয়া। তিনি বলেন, রাস্তার যেই দশা অইছে। মনে অইতাছে এইডা দেহার মত কেউ নাই। যদি কেউ থাকতো তাইলে রাস্তাডা আর ইমুন থাকতো না। রিসকা লইয়া বাইর অইতেই ডর করে। লাইজ্জার ফত ঘুইরা যাই তবুও পারতে এ পথ ব্যবহার করিনা। কষ্ট হয় তবুও রিস্ক নেইনা। এই রাস্তাডা ঠিক অইলে আমগোর লাইগা অনেক ভালা অইব। তারাতারি রাস্তাডা ঠিক করার লাগি দাবি জানাই।

জামালিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জুনায়েদ মিয়া। তিনি বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। রাস্তাটিতে দুইটা পুল রয়েছে যেগুলি অত্যন্ত সরু এবং ভঙ্গুর। রাস্তাটি অতিদ্রুত মেরামত, পুল গুলি সংস্কার এবং যথেষ্ট প্রশ্বস্ত করার অনুরোধ রইল। এ ব্যাপারে এলজিইডি কর্মকর্তা এবং আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে বিনীত অনুরোধ রইল। রাস্তাটিতে দ্রুত কাজ শুরু করে আমাদের কষ্টের উপশম করুন।

রাস্তাটি মেরামতের বিষয়ে আমরা কথা বলেছি নজরপুর ইউনিয়ের চেয়ারম্যান বাদল সরকারের সাথে।

তিনি বলেন, ভাঙা রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ অফিসের আওতাধীন। আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, সদর ইউএনও ও সড়ক জনপথ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন অতিদ্রুত রাস্তা সংস্কার করে দিবেন। এ সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রাথমিক ভাবে পরিদর্শন ও মাপ ঝোক করেন। তারপরেই দেশে করোনা মহামারি দেখা দেয়। যে কারনে রাস্তা সংস্কারের কাজটি পিছিয়ে যায়। তবে দেশের অফিস আদালত আবার পুরোপুরি সচল হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ রাস্তার কাজটি শুরু হবে। আমার পক্ষ থেকে যতটুকু চেষ্টা তদবির করার সব করব। কারন এর ভুক্তভোগি আমি নিজেও। যদি রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদ বা এলজিইডির আওতায় থাকত তাহলে এতদিনে সংস্কার হয়ে যেত।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নরসিংদীতে যোগাযোগ করা হলে ওখানে নির্বাহী প্রকৌশলী কাউকে পাওয়া যায়নি। অফিস সূত্রে রাস্তাটির সংস্কারের ব্যাপারে জানা যায়, অফিস থেকে রাস্তাটি মেরামতের জন্য প্রস্তুতি চলছে। পর্যায়ক্রমে এ রাস্তার পালা আসবে তখনই রাস্তাটি মেরামত করা হবে। খুব শীঘ্রই রাস্তাটির কাজ শুরু হবে বলে সড়ক ও জনপথ অফিস আমাদের আশ্বস্ত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x