ঢাকা, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন
পছন্দ না হওয়ায় ভেঙে ফেলা হয়েছে মুজিববর্ষের ঘর
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

‘‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা যদি চাও,

রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।

বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি,

একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।’’

 

পল্লীকবি জসীম উদদীনের আসমানী কবিতার রহিমন্দীরের মতো আর এক রহিমন্দীর সন্ধান পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে। তবে তার নামটি ভিন্ন। কিন্তু ঘরটি আসমানীদের মতো।

তার নাম ইসমাইল বিশ্বাস(৩৫)। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে একটি ঝুঁপড়ি ঘরের মধ্যে বসবাস করছেন। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরটি হয়ে ওঠে ব্যবহারের অনুপযোগী। অনুদানের একটি ঘরের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে তিনি ঘুরেছেন। কিন্তু একটি ঘরের ব্যবস্থা কেউ তাকে করে দেয়নি। বাধ্য হয়ে এই ঝুঁপড়ি ঘরেই সে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ইসমাইল বিশ্বাস বর্ষাপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম বিশ্বাসের ছেলে।

অপরদিকে, একই গ্রামের মৃত রাঙ্গামিয়া বিশ্বাসের ছেলে ওবায়দুল বিশ্বাস পেয়েছেন মুজিববর্ষের একটি ঘর। এই ঘরটি তার পছন্দ না হওয়ায় সম্প্রতি তিনি ভেঙে ফেলেছেন। তবে তার বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করার মতো বড় একটি টিন-কাঠের ঘর রয়েছে। আর্থিকভাবেও ওবাযদুল বিশ্বাস একজন স্বচ্ছল ব্যক্তি। এই ব্যক্তি কিভাবে মুজিববর্ষের ঘর পেলো, এমন প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য লায়েকুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ওবায়দুল বিশ্বাস আমাদের এলাকার একজন স্বচ্ছল ব্যক্তি। সে কোনোভাবেই মুজিববর্ষের ঘর পেতে পারে না। তার চেয়ে অনেক দরিদ্র ব্যক্তি আমাদের এলাকায় রয়েছে। তাদের না দিয়ে ওবায়দুল বিশ্বাসকে ঘর দেওয়াটা কোনোভাবেই উচিৎ হয়নি। তবে আমি শুনেছি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এই ঘরটি এনেছেন। ঘর নির্মাণের পরে তার পছন্দ না হওয়ায় তিনি ঘরটি ভেঙে ফেলেছেন।

টাকা দিয়ে ঘর পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ওবায়দুল বিশ্বাস বলেন, হিরণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬নং ওয়ার্ডের সভাপতি কামরুল বিশ্বাস আমাকে ভালোবেসে এই ঘরটি দিয়েছেন। এই ঘর আনতে আমার কোন টাকা লাগেনি। ঘরটি নির্মাণের পরে আমার পছন্দ না হওয়ায় আমি ভেঙে ফেলেছি।

তবে ওবায়দুল বিশ্বাসের স্ত্রী লাইলী বেগম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঘর পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার স্বামী ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঘরটি এনেছেন। তবে কাকে টাকা দিয়েছেন, তা আমার জানা নেই।

হিরণ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল বিশ্বাস বলেন, এই ঘরটি আমি দেইনি। ঘরটি হিরণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান দিয়েছেন।

হিরণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, হিরণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬নং ওয়ার্ডের সভাপতি কামরুল বিশ্বাসের সুপারিশে আমরা মুজিববর্ষের ঘর পাওয়ার জন্য ওবায়দুল বিশ্বাসের নামটি নির্বাচন করেছিলাম।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ আরটিভি নিউজকে বলেন, যেহেতু মুবিবর্ষের ঘরগুলো সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এই ঘরগুলো ইচ্ছা হলেই ভেঙে ফেলা যায় না। বিষয়টি আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x