ঢাকা, রবিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ক্লাস নেয়া হবে যেভাবে
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে। শুক্রবার চাঁদপুরের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি একযোগে সব শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে, বা কিভাবেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নেবেন- এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

আলভিনা রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমি জানি না ছেলের ক্লাস প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হবে কি না, অথবা ক্লাসের সময় অভিভাবক স্কুলে অবস্থান করতে পারবেন কি না।’

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম এ খায়ের বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং আগামী বছরের পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিনই ক্লাস নেয়া হবে। শুরুতে একসঙ্গে সব শ্রেণির ক্লাস হবে না। ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস হবে। এছাড়াও একই সঙ্গে অনলাইন ও টেলিভিশনের ক্লাসও চলবে।

মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার আগেই মন্ত্রণালয় স্কুল খোলার বিষয়ে একটি রি-ওপেনিং প্লান তৈরি করেছে। অনেক আগে থেকেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কাজ করছিল। এসব পরিকল্পনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ করার বিষয়টিও রয়েছে। প্রথমে হয়তো এ বছরের বাকি শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে একদিন করে হবে। পরে অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে।

তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থীর কোন দিন ক্লাস হবে তা হয়তো আগামী ৫ সেপ্টেম্বরের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, এবং সিদ্ধান্তই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।

এর আগে জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফের ২৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ বন্ধের ফলে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর করোনা–সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং টিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, শিগগিরই স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে একাধিক মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক রেবেকা পারভীন বলেন, শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী বিদ্যালয় খোলার তারিখ জানালেন। তবে অনেক আগে থেকেই বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যাওয়া-আসা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট বিতরণ, মূল্যায়ন, টিকাগ্রহণ- সবই করতে হয়েছে। এরমধ্যে বিদ্যালয় খুলতে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে একই ঘটনা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। সরকারি প্রাথমিকের এক শিক্ষক বলেন, ‘বন্ধের মধ্যেও আমরা ক্লাস শিট শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। নানা রকম কাজ করেছি। এখন সশরীরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও করোনা ঝুঁকি এড়ানোই হবে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কি না সে বিষয়ে করোনা– সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে কারিগরি কমিটি। সেখানেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মত উঠে আসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে আগামী রোববার আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

x