ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২২ অপরাহ্ন
পুলিশ কর্মকর্তা ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

নারী নির্যাতন মামলায় পুলিশ সার্জেন্ট ওমর ফারুক এর বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ৬।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, সার্জেন্ট ওমর ফারুক একজন সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর সদস্য। বিয়ে করেন আরেক নারী পুলিশ অফিসারকে। কিন্তু সংসার জীবনে ফারুক সুশৃঙ্খল ছিলেন না। স্ত্রীকে বাদ দিয়ে অন্য নারীর প্রতি আসক্তি ছিল লক্ষণীয়। তিনি অন্য নারীর সঙ্গে ফেইসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। বিবাহিত স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তিনি ময়মনসিংহ ভালুকা থানার ফারজানা তাহরিন মিতু নামের এক তালাকপ্রাপ্তা নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এই পরকীয়ার জের ধরে স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের শুরু। চলতে থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য যখন তার স্ত্রী মরিয়া সেই সুযোগে তিনি বিভিন্ন অযৌক্তিক শর্ত জুড়ে দেন নিরীহ স্ত্রীর উপর (পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না, বেতনের টাকা স্বামীর কাছে দেয়া, মোটরসাইকেল কিনে দেয়া) ইত্যাদি।

একসময় সহ্য করতে না পেরে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করে সেই নারী পুলিশ অফিসার। অভিযোগটি অমীমাংসিত থাকা অবস্থায় প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর অনুমতি ব্যতীত দ্রুতগতিতে গোপনে সেই ফারজানা তাহরিন মিতু নামের মহিলার সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সার্জেন্ট ওমর ফারুক।

প্রথম স্ত্রী ও ডিপার্টমেন্টের অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা চাওয়া হলে সার্জেন্ট ওমর ফারুক ব্যাকডেট ব্যবহার করে একটি তালাকনামা প্রস্তুত করেন এবং সেটা নিয়ম মতো পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন। অথচ তার স্ত্রী এখনও তালাকের কোন নোটিশ পাননি।

উপায়ন্তুর না দেখে, পুলিশ অফিসার স্ত্রী কথিত তালাকের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল বরাবর ও এলাকার চেয়ারম্যান এবং গাজীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে তালাকের সত্যতা যাচাইয়ের আবেদন করেন।

আবেদন এর পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান তালাকের কোন নোটিশ পাননি মর্মে জানায়। অপরদিকে, ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল জানান, ডাকঘর থেকে রেজিস্ট্রেশনপত্র দুটি প্রেরণ করা হয়নি।

ম্যাজিস্ট্রেট তার আদেশে এই তালাক নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া, সার্জেন্ট ফারুক নারায়ণগঞ্জে ডিউটিরত অবস্থায় তালাক নিবন্ধিত হয়েছে। উক্ত ঘটনায় কাজী ও বাদীর স্বামী সার্জেন্ট ওমর ফারুকের যোগসাজশ রয়েছে মর্মে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার বিষয়ে উল্লেখ করেন।

পরবর্তীতে সেই নারী পুলিশ অফিসার তার সার্জেন্ট স্বামীর বিরুদ্ধে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এবং ঢাকার সিএমএম কোর্টে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত শুনানি অন্তে নারী নির্যাতন এর মামলাটি পিবিআই এবং ডিভোর্স এর কাগজ জাল জালিয়াতির মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পিবিআই তদন্তে নারী নির্যাতন ও ডিভোর্স নিয়ে জালিয়াতির এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে এবং যার ফলশ্রুতিতে আসামির বিরুদ্ধে পিবিআই আদালতে চার্জশিট জমা দেয়।

আজ মঙ্গলবার উই রিপোর্টের শুনানি শেষে আদালত অপরাধ আমলে গ্রহণ করে সার্জেন্ট ওমর ফারুক এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান আরটিভি নিউজকে জানান, মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীর উপর চাপ সৃষ্টি করছে আসামিপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞ আদালত আজ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আশা করি, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x