পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় সিজার করতে গিয়ে স্মৃতি আকতার (২৪) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে বোদা উপজেলা সদরের নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
স্মৃতি বেগমের বাড়ি বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ভক্তেরবাড়ি গ্রামে। সে ওই গ্রামের আনিসুর রহমানের স্ত্রী। স্মৃতি বেগমের স্বামী আনিসুর, বাবা সারোয়ার হোসেন সকলেই বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। এই সুযোগে নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক উজ্জল সরকার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালীদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। স্মৃতি বেগমের মেজ চাচা আব্দুর রাজ্জাককে এক লাখ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, আনিসুর রহমান ঢাকায় থাকেন। গর্ভাবস্থায় স্মৃতি বেগম তার বাবার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার বড় বালিয়া বগুড়াপাড়ায় বাবার বাসায় ছিল। শুক্রবার বিকেলে স্মৃতি আকতার তার মাকে নিয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) চিকিৎসক ডা. এম আর রেজাকে দেখাতে নিরাময় নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসেন। ডা. রেজা তাকে সিজার করার কথা বলেন। বিকেলে সিজারে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ওই রোগীর পেটে ব্যাথা, বমি ও শাস কষ্ট শুরু হয়। তাৎক্ষনিক তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় গেলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেও ডাক্তারের ভুলে তার প্রথম সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলো না স্মৃতি আকতার। আনিসুর ও স্মুৃতি আকতার দম্পতির এটিই প্রথম সন্তান। সদ্য ভুমিষ্ঠ শিশুটি বর্তমানে ওই ক্লিনিকেই চিকিৎসাধীন আছে।
এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে স্মুতি আকতারের স্বামী, তার বাবা-মা ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছেন। ক্লিনিক মালিক ও তার লোকজন বাড়ি থেকে বোদায় নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন স্মৃতির মেজ চাচা আব্দুর রাজ্জাক। বিষয়টি নিয়ে বোদা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান সুজার বাসায় বৈঠক হয়েছে। উভয়পক্ষ শিশুটির জন্য দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমাধান করেছেন বলে জানিয়েছেন স্মৃতির মেজ চাচা আব্দুর রাজ্জাক।
এ বিষয়ে জানতে ক্লিনিক মালিক উজ্জল সরকারের (০১৭১১২৮১৮৩৬) নম্বর মোবাইলে এবং গাইনী চিকিৎসক ডা. এম আর রেজার (০১৭৫২২৪৪৭৫৯) নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাঈদ চৌধুরী নিরাময় ক্লিনিকে সিজার করার সময় এক নারীর মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছেন তবে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বোদা উপজেলা সদরের এই ক্লিনিকে গত ৫ বছরে অর্ধ শত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রভাবশালী হওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন কেউই তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।