আদালতের কাঠগড়ায় বসে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মোবাইল ফোনে কথা বলার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এ বিষয়টি মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) নজরে আসে আদালতের।
বুধবার (২৫ আগস্ট) এ বিষয়ে ওসি প্রদীপকে সতর্ক করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
এ ছাড়া বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়ে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
এর আগে, বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেছেন, সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ কালে ‘আসামি ওসি প্রদীপের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের ঘটনায়’ দায়িত্ব অবহেলার কারণে আদালত পুলিশের ৩ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যদের নাম না প্রকাশ করলেও এদের মধ্যে আদালত পুলিশের একজন এটিএসআই এবং দুজন কনস্টেবল রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, জেলা পুলিশ কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ বড়ুয়াকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই তদন্ত কমিটিতে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদ মর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে।
গত সোমবার (২৩ আগস্ট) সিনহা হত্যা মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনে আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে কাঠগড়ায় বসে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এ সময় আদালতে উপস্থিত থাকা কোনো এক ব্যক্তি ওসি প্রদীপের ফোনে কথা বলার দৃশ্যটি মোবাইলে ধারণ করেন।
পরে আদালতের কাঠগড়ায় বসে ওসি প্রদীপের মোবাইল ফোনে কথার দৃশ্য সংবলিত ওই ব্যক্তির ধারণ করা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এই ছবিটি গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে আদালত ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট নানা পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে।
সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন সোমবার (২৩ আগস্ট) আদালতে হাজির হওয়ার সময় ওসি প্রদীপ কালো রঙের গেঞ্জি পরিহিত ছিলেন। যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তাতেও গায়ে কালো রঙের গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে তাকে। আর দ্বিতীয় দিন আদালতে উপস্থিত হওয়ার সময় প্রদীপের গায়ে ছিল গোলাপি রঙের গেঞ্জি।
ধারণা করা হচ্ছে, ছবিটি আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে সোমবার যে কোনো সময়ের হতে পারে।
পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে কাঠগড়ায় বসে মোবাইল ফোনে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার দৃশ্যসংবলিত কথিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতে বিচারকের নজরে আসে। এ ব্যাপারে বিচারক বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সতর্ক করেছেন বলে জেনেছি।
তিনি বলেন, সোমবার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে যে কোনো সময় ওসি প্রদীপ মোবাইল ফোনে কথা বলে থাকতে পারেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকা কেউ একজন মোবাইল ফোনে ছবিটি ধারণ করেছেন। তবে ছবিটি সঠিক কি না, তা এখনও যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়নি।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর পুলিশ আদালতে দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই আদালত পুলিশের ৩ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
এ ঘটনা তদন্তের জন্য একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান হাসানুজ্জামান।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply