ঢাকা, শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন
সারাদেশে কঠোর লকডাউন আগামীকাল থেকে শিথিল হচ্ছে
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে আজ। আগামীকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়া বিধিনিষেধ শিথিলকালে পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা যোগ দেন সচিবালয় থেকে।

বিধিনিষেধের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিনোদনকেন্দ্র ও জনসমাগম হয় এমন ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়া হয়নি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানাবে। তারা (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) এটা নিয়ে আলোচনা করছে কীভাবে কী করা যায়। আগে তারা ভ্যাকসিনেশন জোরদার করছে। যাতে ছাত্রদেরও ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া যায়। তারপর দেখা যাক। এ বিষয়ে পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্রিফ করবে।

এর আগে গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামীকাল বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন সংখ্যার সমান যাত্রী নিয়ে চলবে সব ধরনের গণপরিবহন। সড়কপথে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক গাড়ি চলতে পারবে। খুলবে দোকান-শপিং মল এবং খাবারের দোকান। হোটেল-রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে চলবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে। তবে আগের বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। সে সময় ২৩টি শর্ত দেয়া হয়। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হয়। পরে কিছুটা শিথিলতা এনে বিধিনিষেধের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করার পর সড়কপথে অর্ধেক বাসে আসনের সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে চলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে সেই অর্ধেক সংখ্যা কীভাবে নির্ধারিত হবে ও সমপরিমাণ যাত্রী কেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, অর্ধেক বাস চলার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বসে ঠিক করে দেবে।

অর্ধেক বাস চলবে, এর যুক্তি কী—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা  রক্ষাকারী বাহিনী থেকে সাজেশন দেয়া হয়েছে। তারা জেলা পর্যায়ে ডিসি, এসপি বা পরিবহন-সংক্রান্ত মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসে ঠিক করে দেবে, অর্ধেক বাস একদিন চলবে, পরদিন বাকিগুলো।

অফিস-আদালত খোলার পর বাসের সংখ্যা কম হলে তো চাপ বাড়বে—এ নিয়ে তিনি বলেন, এটা মেইনলি আন্তঃজেলা বাসের জন্য বলেছে। বাইরে থেকে তো কম লোক আসে। তবে আমরা স্থানীয় প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। এটা তদারক কীভাবে করবেন—এ নিয়ে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বসে ঠিক করা হবে। তারা একটা পদ্ধতি বের করবেন। বেইজিংয়ে দেখেছি একদিন এ নম্বর আসে, আরেক দিন আরেক নম্বর। সিটি সার্ভিসের বিষয়ে কী হবে—এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটাও মেট্রোপলিটন পুলিশ, মালিক সমিতি, বিআরটিএ বসে সিদ্ধান্ত দেবে।

এদিকে গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনকে উৎসাহিত করতে আগামী ৬ অক্টোবরকে ‘জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবসটি উদযাপনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এ-বিষয়ক পরিপত্রের ‘গ’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবটি অনুমোদনের কারণ ব্যাখ্যায় সচিব বলেন, এসডিজির একটা লক্ষ্যমাত্রা আছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের ৮০ শতাংশ জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তাই সাধারণ মানুষকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনে উৎসাহী করার লক্ষ্য নিয়ে এ সিদ্ধান্ত বলেও জানান তিনি।

বৈঠকে জাদুঘরের নিদর্শন নষ্ট করলে ১০ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন, ২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলোকে আইনে রূপান্তরের বাধ্যবাধকতা থাকায় এটিকে আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে। আইনে স্থাবর নিদর্শন ধ্বংস বা ক্ষতি করলে ১০ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া নিদর্শন চুরি, পাচার বা ক্ষতি করলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড কিংবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো জানান, বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা আইন, ২০২১-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, পশু-পাখির চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে আইনে বলা আছে। দর্শনার্থীরা কীভাবে ঘুরবেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত বা প্রতিবন্ধীদের চিড়িয়াখানা দেখার জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যদি কেউ ফি ছাড়া চিড়িয়াখানায় ঢোকে তাকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছিল। তবে মন্ত্রিসভা এটিকে পরিবর্তন করেছে। কারণ ঢোকার ফি অনেক কম। এজন্য দুই মাসের জেল ও ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। পশুর ক্ষতি করলে কী হবে, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংয়ের সময় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০২১-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগের অধ্যাদেশকে বদলে এ আইন করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.