মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ী এলাকা ও বনাঞ্চলে বেড়েছে সাপের সংখ্যা। এর মধ্যে প্রচুর পরিমানে রয়েছে বিষাক্ত সাপ। প্রায়শ্চই সর্প ধ্বংসনের খবর পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে মারাও গেছেন একজন। কামড় খেয়েছেন আরো অনেকে। কিন্তু শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজার জেলার কোন হাসপাতালে সাপে কামড়ের এন্টিভেনম নেই। একমাত্র উপায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
চিকিৎসকরা বলেন, বিষাক্ত সাপে কামড়ের পর যত দ্রæত সম্ভব এন্টিভেনম দিতে হবে না হলে মানুষকে বাঁচানো যাবেনা। কিন্তু শ্রীমঙ্গল বা কমলগঞ্জ থেকে সিলেট পৌছাতে অন্তত দুই/আড়াই ঘন্টা সময় প্রয়োজন। ততক্ষনে সাপে কামর খাওয়া ব্যাক্তির পুরো রক্তে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে তিনি মৃত্যুও কুলে ঢলে পড়েন। এ বস্থায় এখন জরুরী হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ও শ্রীমঙ্গল ৫০ শয্যা হাসপাতালে এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বনবিভাগ সুত্রে জানাযায় সম্প্রতি প্রচুর পরিমানে সাপ মৌলভীবাজারের পাহাড়ী এলাকায় বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলের দোকান, বাড়ি, বাজার ও গাড়ি থেকে উদ্ধার হচ্ছে। কামর খেয়েছেন তিনজন এর মধ্যে একজন মারা গেছেন । সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই শ্রীমঙ্গল নোয়াগাও গ্রামে সাপের কামড়ে ৮ বছরের এক শিশু আহত হয়েছে। ২৩ জুলাই শ্রীমঙ্গল ডুলুছড়া এলাকায় একটি দোকানের জিনিশ রাখার থাক থেকে বিশাল একটি দাঁড়াশ সাপ উদ্ধার করা হয়। ১৯ জুলাই শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগান থেকে ৩টি জীবিত ও ২টি মৃত সাপ উদ্ধার করা হয়। যার কামরে একজন মারা যান। ৫ জুলাই শ্রীমঙ্গল এম আর খান চা বাগানে সাপের কামরে আহত হন চা শ্রমিক প্রবাসী নেপালী। ১১ জুলাই শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কাঁচা বাজারের ২য় তলা থেকে ও ১০ জুন শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার কাঠালবাহী জীপ গাড়ি থেকে বিপন্ন প্রজাতীর দুটি আইড ক্যাট ¯েœক উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও চলমান বছরে আরো অসংখ্য সাপ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান, শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব।
শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাক সেলিম রেজা চৌধুরী জানান, তার বাগানের শ্রমিককে বিষাক্ত গোখরা সাপে কামর দেয়ার পর তাকে প্রথমে শ্রীমঙ্গল, পরে মৌলভীবাজার, শেষে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠান। কিন্তু ততক্ষনে তার বাগানের শ্রমিক মারা যায়। যদি মৌলভীবাজারে এর ব্যবস্থা থাকতো তাহলে হয়তো সে বাঁচতো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রান্স চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জে দেশের সর্বাধিক চা বাগান এবং চা বাগানেও প্রচুর ঝোঁপঝাড় রয়েছে সেখানে প্রচুর বিষাক্ত সাপও রয়েছে। তাই শ্রীমঙ্গলে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা খুবই প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, মৌলভীবাজারে-এ ব্যবস্থা রাখার জন্য বহুদিন ধরে তিনি সংশ্লিষ্ঠদের অনুরোধ করে আসছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
এ ব্যপারে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গলের সহকারী বন সংরকক্ষ শ্যামল কুমার মিত্র জানান, এ এলাকায় বিষাক্ত সাপে কাউকে কামর দিলে সিলেট পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে বাঁচানো সম্ভবনা। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করা হবে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে দায়িত্ব প্রাপ্ত তত্ত¡¦ধায়ক ডা: বিনেন্দু ভৌমিক জানান, মৌলভীবাজারে সাপে কামরের এনন্টিভেনম নেই। এ ভেনম প্রদানের বেশ কৌশল রয়েছে প্রশিক্ষন ছড়া এটি দেয়া সম্ভব না। এর জন্য জনবল প্রয়োজন। আইসিউ বেড থাকলে ভালো। কারন এ এন্টিভেনম প্রদানের সময় এনাফাইলেকটিক শক হয়ে (বিরুপ প্রতিক্রিয়া) রোগী মারা যেতে পারেন।
এ ব্যপারে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা: জালাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় সম্প্রতি সাপের কামড় ও উপদ্রবের বিষটি তিনি অবগত রয়েছেন। ইতিমধ্যে অনলাইনে সাপে কামড়ের ব্যাবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষন দেয়া হয়। বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও এতে অংশনেন। মৌলভীবাজারে সাপের কামড়ালে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
Leave a Reply