ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন
যমুনার পেটে গিলে খাচ্ছে পাঁকা বাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
মো: শরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভৈরববাড়ি গ্রামে যমুনার পেটে গিলে খাচ্ছে   ৯২টি পরিবার । এতে শতাধিক মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও শতাধিক ঘর বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। বিষয়টি দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যমুনার পানি কমতে থাকায় শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাতে ও শনিবার (২৪ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ভাঙন দেখা দেয় গ্রামটিতে। শুক্রবার রাতে ১৪টি বাড়ি নদী গর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। ৭৮টি বাড়ি ভাঙন শুরু হওয়ার পর ঘরবাড়ি ভেঙে শনিবার (২৪ জুলাই) সরিয়ে নেয়া হয়েছে। হঠাৎ করে একদিনে একটি গ্রাম উপজেলার মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হইয়ে পরিবার গুলা গৃহহীন হয়ে পড়ায় হাহাকার শুরু হয়েছে গ্রামটিতে। এ দিকে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
শনিবার বিকেলে সরেজমিন ভৈরববাড়ি গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাড়িঘরের জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় জমা করে রেখেছে। কেউ কেউ নিরাপদ স্থানে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। গ্রামটিতে যাওয়ার পথে দেখা যায় বেশ কিছু অংশ গাইড বাঁধ দেয়া হয়েছে । পার্শ্ববর্তী বেলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও শতাধিক ঘর বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। গাইড বাঁধের পর আরো কিছু অংশ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে ভাঙন প্রতিরোধে। এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ জিও ব্যাগগুলো ফেলা হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে।

এলাকাবাসী, হালিম মিয়া জানান, ২৩ শতাংশের বাড়ির অর্ধেক শনিবার যমুনা চলে গেছে। আসবাব পত্র অন্যের বাড়িতে ও ঘরের বেড়া রাস্তায় রাখা হয়েছে। কোথায় থাকবো ও কোথায় গিয়ে বাড়ি করবো তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
আছমা বেগম জানান, এই বসত ভিটা আমার শ্বশুর ৯০ বছর বসবাস করে গেছে। আমরাও প্রায় ৪০ বছর যাবত বসবাস করছি। সেই ২৫ শতাংশের বাড়িটিও চলে গেলো। এখন অন্যের বাসায় রইছি। কই থাকবো, কি করবো সেটা ভেবে পাচ্ছি না।
ওই গ্রামের মজনু প্রামানিক জানান, একটি মুরগীর খামার ও বসতবাড়ি শুক্রবার রাতে নদী গর্ভে চলে গেছে। সব হারিয়ে এখন আমি অসহায়। সামনের দিন গুলা কিভাবে চলবো সেই চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছি।
তার প্রতিবেশি গিয়াস উদ্দিন জানান, হঠাৎ করে ভিটেমাটি হারিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছি। শুক্রবার বিকেলেও তার বাড়িঘর ছিল। কিন্তু শনিবার সকালেই তিনি সব হারিয়ে পথে বসতে হয়েছে। শাহীন মিয়া জানান, এখন কোথায় ঘর বাড়ি স্থাপন করবো তা ভেবে পাচ্ছি না। তাদের মতো অসহায় মানুষদের সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন জানান, ৯২টি পরিবার শুক্র ও শনিবার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি শনিবার সকালে ভাঙন কবলিত ওই গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। নদীতে ঘরবাড়িসহ সবকিছু বিলিন হয়ে যাওয়া ১৪টি পরিবারকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা করেছেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙন কবলিত ওই গ্রামে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হয়েছে।

2 responses to “যমুনার পেটে গিলে খাচ্ছে পাঁকা বাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান”

  1. … [Trackback]

    […] Find More on that Topic: doinikdak.com/news/40001 […]

  2. … [Trackback]

    […] Read More on to that Topic: doinikdak.com/news/40001 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x