এমনিতেই নানা সংকটে জর্জরিত মাদারীপুর সদর হাসপাতাল। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রাপাতি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন রোগীরা।হাসপাতালটি বর্তমানে ১০০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ৫০ শয্যারও কম।
রোগীদের ভোগান্তি দূর করতে ২৫০ শয্যার নতুন ভবন তৈরি করা হয়। মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৮তলা ফাউন্ডেশনের ৬ তলা ভবনের মাদারীপুর সদর হাসপাতালটি ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুবছর আগে এই ২৫০ শয্যায় উন্নতি করণের কাজ শেষ হয়। তবে এখনো শুরু হয়নি ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন চিকিৎসক সংকট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিসহ নানা সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে নতুন ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনে আনা হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি। এসব আধুনিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি কিনতে সরকারকে গুনতে হয়েছে অনেক টাকা। কিন্তু অব্যবহৃত অবস্থায় পরে থাকায় নষ্ট হচ্ছে এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে রোগীরা পাচ্ছে না তাদের কাংখিত সেবা। রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায়না, যেতে হয় বেসরকারী হাসপাতালে ।
চিকিৎসা নিতে আসা সাকিব নামে একজন বলেন, ‘আমি চিকিৎসার জন্য মাদারীপুর সদর হসাপাতালে এলাম। এসে দেখি পাশে এতবড় হাসপাতাল বিল্ডিং, অথচ প্রায় সকল পরীক্ষা বাইরে করাতে হলো । এই বিল্ডিং চালু হলে আমাদের এই ভোগান্তিতে পরতে হতোনা।’
‘নিরাপদ চিকিৎসা চাই’ সংগঠনের মাদারীপুর শাখার সভাপতি মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, ‘মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ১৮৭৬ সালে যাত্রা শুরু করে। দেশের প্রাচীন একটি হাসপাতাল। অথচ অনেক সেবাই এখানে পাওয়া যায় না। তাই আমরা চাই, দ্রুত ২৫০ শয্যা চালু হোক। সরকারি সব চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, শিশু বিশেষজ্ঞসহ একাধিক পদে আরও অনেক লোক দরকার। মূলত জনবল সংকটের জন্যই আমরা নতুন ভবন চালু করতে পারছিনা। জনবল সংকট নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশাকরি খুবশীঘ্রই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে । কার্যক্রম শুরু হলে অনেক সংকটই কেটে যাবে।’
২৫০ শয্যার হাসপাতালটি উদ্বোধন হলে মাদারীপুর জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে। স্থানীয়দের দাবি প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল নিয়োগ দিয়ে দ্রুত হাসপাতালটি খুলে দেওয়া হোক। সমাজের সুধীজনরা মনে করেন হাসপাতালটি চালু হলে মাদারীপুর জেলার সরকারি চিকিৎসা সেবার চিত্র বদলে যাবে। হাসপাতালটি চালু হলে একটি মেডিকেল কলেজে যে ধরনের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়,এখানেই সেই মানের সেবা পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তারা।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ মালেকুজ্জামান বলেন, “আমাদের মাদারীপুরে এত উন্নতমানের একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি চালু হলে পুরো মাদারীপুরের চিকিৎসা সেবায় নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। তখন আর চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্তে ছুটে যাওয়া লাগবে না। শুনেছি এখানে খুবই উন্নত মানের মেশিন আনা হয়েছে। যদি দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়, তাহলে মাদারীপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরন হবে।”