ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৯ অপরাহ্ন
আজ ১৭ জুন বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস
ভাস্কর সরকার (রা.বি) :

প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী। এই পরিবর্তনের ধারায় কখনও সিডর, কখনও সুনামি, কখনও আইলা, কখনও হারিকেন, কখনও নার্গিস, কখনও ফনি, কখনও ভূমিকম্প, কখনও অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, আম্পান, সর্বশেষ ইয়াস বিভিন্ন রকমের রোগ-বালাই দুর্যোগ আকারে দেখা দিচ্ছে। মারা যাচ্ছে মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠের ফসল। বাড়ছে খাদ্য সংকট। ঘরবাড়ি মিশে যাচ্ছে মাটির সাথে। ফলে মানুষ হারাচ্ছে তার মাথা গোজার ঠাঁই।

নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো জলবায়ুর কু-প্রভাবে বিশ্বে মরুকরণও একটি অন্যতম সমস্যা। বিশ্ব মরুময়তা ও অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ দিবস আজ। এ বছর দিবসটির স্লোগান ‘Restoration. Land. Recovery. We build back better with healthy land.’

১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খরা ও মরুকরণের প্রতি সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে নাইরোবিতে বিশ্ব মরুকরণবিরোধী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরোয় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলনের পরপরই মরুকরণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

রিও সম্মেলনের এজেন্ডা-২১-এর প্রস্তাবটি ১৯৯২ সালে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে গৃহীত হয় এবং ইন্টার গভর্নমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি মরুকরণ সংক্রান্ত খসড়া কনভেনশন চূড়ান্ত করে। ১৯৯৪ সালের জুন মাসে কনভেনশনের দলিল চূড়ান্ত হয়। এ কনভেনশনে ৫০টি দেশ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় দলিলটি। বাংলাদেশও এ কনভেনশন অনুমোদন করে। পরবর্তী সময়ে খরা ও মরুকরণ সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তুলতে ১৭ জুন পালন করা হয় বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস।

মরুকরণ যেভাবে বিশ্বব্যাপী মাথাব্যথার কারণ, তেমনি বাংলাদেশেও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। জনসংখ্যা বাড়ার কারণে দিন দিন আমাদের ফসলি জমি কমে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে কমছে গাছপালা, বন-জঙ্গল। শুকিয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। দিন দিন যেমন আমাদের ফসলি জমি কমছে, একই সঙ্গে খরায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া আবশ্যক।

পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট নদীর সংখ্যা ৩১০টি। এরমধ্যে মৃত ও মৃতপ্রায় নদীর সংখ্যা ১১৭টি। এদিকে সেন্টার ফর এনভয়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিইউএস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সাধারণ হিসাবে গত ৪০ বছরে শুধুমাত্র তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা-এই তিনটি নদীতেই এ পর্যন্ত বিলীন হয়েছে ১ লাক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর জমি। আর তার বিপরীতে নতুন ভূমি জেগেছে মাত্র ৩০ হাজার হেক্টর। প্রতি বছর কোন না কোন নদীর শাখা ধীরে ধীরে পলি পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোন কোন নদী দখল হয়ে যাচ্ছে ভূমিদস্যুদের হাতে। পরিকল্পনার অভাবেই নদীমাতৃক বাংলাদেশ থেকে এভাবে নদী হারিয়ে যাচ্ছে।

‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’ খুব সনাতন একটি স্লোগান হলেও এর গুরুত্ব বর্তমানে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। কারণ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই স্বাভাবিক  আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন ঘটায় কমে যাচ্ছে শীতকালের স্থায়ীত্ব, বাড়ছে ভূমি ও পাহাড় ধস, ঘন ঘন ভূমিকম্প। এছাড়া খরা বন্যা টর্নেডো সাইক্লোনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এবং ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে মরুময়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও।

তাই মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামল দেশটি হয়তো একদিন হারিয়ে যেতে পারে মরুভূমির ধূসর বালির গহ্বরে। বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষন করে বিশ্লেষকরা এটাই আশঙ্খা করছেন। তারা বলেছেন মরুকরণের প্রধান দুটি বিষয় হচ্ছে একটি বিস্তৃত এলাকা ছেড়ে যদি সেখানকার মাটি অনুর্বর হতে থাকে এবং যদি নদী-নালা, খাল বিল শুকিয়ে যেতে থাকে ও বৃষ্টির অভাব ঘটে। বিগত কয়েক দশক ধরে এ লক্ষণগুলো বেশিভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে বাংলাদেশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x