ঢাকা, মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ১২:৪১ অপরাহ্ন
ভাগ্য খুলেছে মানসিক ভারসাম্যহীন ও বাকপ্রতিবন্ধী আরাফাতের
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

বরগুনার পাথরঘাটায় জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না বাকপ্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন রোগে ভুগছে ১১ বছর বয়সী আরাফাত। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । জন্মের এক বছর পরে আরাফাত তার বাবাকে হারিয়েছে। বাবা জাফর বিশ্বাস মারা গেছে প্রায় ১০ বছর আগে। তিন বছর আগে মা খাদিজা বেগম দ্বিতীয় বিবাহ করেন।

আরাফাতের স্থান হয় নানা বাড়িতে নানীর কাছে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় প্রায়ই ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কিছুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল আরাফাত। আরাফাতের নানী  সাফিয়া বেগম খুঁজে খুঁজে অসুস্থ হয়ে পড়েছে । হারিয়ে যাওয়ার চারদিনের মাথায় স্বজনদের খুঁজে পাওয়ার পর ভাগ্য ফিরছে মানসিক ভারসাম্যহীন আরাফাত হোসেনের।

আরাফাত প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার মা খাদিজা বেগম কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। নানীর সাথে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন আরাফাত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে,  নানী সাফিয়া বেগম পাচ্ছেন বিধবা ভাতা।

পাথরঘাটা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জানান, আরাফাতকে উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

এদিকে উপজেলা পরিষদ থেকে আরাফাতের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর দেয়ার জন্য আশ্বস্ত করেছেন।

এর আগে রোববার (১৩ জুন) সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের টেংরা বাজারে আরাফাতকে স্থানীয় রনি নামে এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী দেখতে পান। পরে স্থানীয় সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকনকে জানালে তিনি উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) সাবরিনা সুলতানাকে অবহিত করেন পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়ে আরাফাতের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আরাফাতকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

পরে ওই দিন রাতে স্থানীয় সমাজকর্মী মেহেদী শিকদার ও অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মল্লিকের সহযোগিতায় পাথরঘাটা থানায় নিয়ে যান সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন।

পরে সোমবার (১৪জুন) সকলে নির্বাহী আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে বরগুনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে মঙ্গলবার (১৫ জুন) বিকেলে সমাজসেবা কার্যালয়ে আরাফাতের নানী সাফিয়া বেগম ও মামা জালালের নিকট আরাফাতকে হস্তান্তর করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, পাথরঘাটা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন, বরগুনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম।

আরাফাতের নানী সাফিয়া বেগম বলেন, আমার নাতি হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক জায়গায় খুঁজেছি তাকে কোথাও খুঁজে পাইনি। আজকের যারা আমার নাতিকে আমার হাতে এনে দিয়েছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, রোববার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের টেংরা বাজারে ফার্মেসি ব্যবসায় রনি বাকপ্রতিবন্ধী শিশু পেয়ে আমাকে খবর দেয়। পরে আমি উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে স্বজনদের অনুসন্ধান করেছি।

ওইদিন রাতে স্বজনদের পেলেও মামা এবং নানী তাকে নেওয়ার জন্য অনীহা প্রকাশ করে পরে থানায় নিয়ে আসার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা সমাজসেবার মাধ্যমে বরগুনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

পাথরঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আবুল বাশার বলেন, রোববার রাতে প্রতিবন্ধী আরাফাতকে থানায় নিয়ে আসলে আমাদের জিম্মায় থাকে। পরদিন সকালে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খোকন যে কাজটি করেছেন এটি খুবই প্রশংসনীয়। সে দীর্ঘদিন ধরে মানবিক কাজগুলো করেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আরাফাতকে ইতোমধ্যেই খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর দিতে উপজেলা প্রশাসনের নিকট সুপারিশ করব।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও)সাবরিনা সুলতানা বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুর  বিষয়ে আমাকে সাংবাদিক খোকন জানানোর পরে আমি পরামর্শ দিয়েছি এবং সবসময় খোঁজখবর নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে আরাফাতকে সকল রকম সহযোগিতা দেয়া হবে।

x