জাল দলিলের কারিগর কুলাউড়ার রাহেল মেম্বার, কারো কাছে কাঠ রাহেল, কারো কাছে জাল রাহেল নামে পরিচিত কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেল। দুইপক্ষের বিরোধের আগুনে কেরোসিন ঢেলে অপকৌশলে জমিজমা-ভিটেবাড়ি হাতিয়ে নেওয়া তার দীর্ঘ দিনের পেশা ও নেশায় পরিণত হয়েছে। তার অপকর্ম জায়েয করতে গড়ে তুলেছে গুপ্তবাহিনী। এ চক্রের সর্বনাশা দুরভিসন্ধির সালিশ বিচার ও জাল-জালিয়াতির দলিলে সংখ্যালঘু নিরীহ হিন্দু ও গরীব মুসলিম পরিবারের অনেকে আজ ভিটে-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
অন্যদিকে গরীবের হক ইউনিয়ন পরিষদে প্রদ্বেয় ডিপ-টিউবওয়েল, রিলিফ,রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কার্যক্রম,সৃজন কর্মসূচিতে তার বিরুদ্ধে ছয়-নয় এর অভিযোগ রয়েছে। তার ইন্দনে কুলাউড়ার এক সময়ের ইউএনও জহিরুল ইসলামকেও শারিরিকভাবে লাঞ্চিত হতে হয়েছে।এ সব চলছে নিরবে নিভৃতে। কাঁদছে বিচারের বাণী কিন্তু রাহেল মেম্বারের বেপরোয়া কার্যকলাপ কোনভাবেই থামছে না।তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না কেউ নানা হয়রানির ভয়ে। কুলাউড়ার হাশামপুর গ্রামে যেন চলছে সামন্ততান্ত্রিক মেম্বার রাজত্ব।সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে রাহেল মেম্বারের পূর্বপুরুষের একাংশ কুলাউড়ার হাশামপুর গ্রামে এসে উঠতি হিসেবে বসতি স্থাপন করে।
তখন তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তারা দিন মজুরিতে সংসার চালাতো। এক পর্যায়ে অভাবী এলাকার মানুষকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা শুরু করে। অনেকের ভিটেবাড়ি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করে রাতারাতি টাকার মালিক হয়ে যায় সে। মানুষের ভিটে-বাড়ির বিক্রির টাকায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিদেশ যেতে না পারলেও আত্মসাৎ টাকায় লল্ডনে পাড়ি জামান রাহেল মেম্বারের ভাইরা। হাসামপুর গ্রামের উত্তরাংশে কুঁড়েঘরে বসবাস করা স্মৃতি রানী জানান, ৩০/৩৫ বছর আগে তার বাড়ির উপর নজর দেয় রাহেল মেম্বারের ভাই আয়ছর ও মতিন। এই পরিবারের এক সদস্যকে সৌদি আরব পাঠানোর নাম করে ৩৭ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রথমে বসত-ভিটা কিনে নেয়। পরে সৌদি আরবে হিন্দুরা গেলে কেটে বস্তায় ভরে সাগরে ফেলে দেয় এ ধরণের ভয়ভীতি দেখালে তার আর সৌদি যাওয়া হয়নি।স্মৃতি রানীর পরিবারের বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন এতে চুরমার হয়ে যায়।বসত-ভিটা নষ্ট করে পথে বসে যায় তারা। বর্তমানে ওই বাড়িতে প্রাচীর দিয়ে দালান ঘর নির্মাণ করেছে মেম্বারের প্রবাসী ভাই রুবেল। পাশাপাশি বাড়ির ইদ্রিস ক্বারীর বসত-ভিটাও নাম মাত্র টাকা দিয়ে কৌশলে নিজের দখলে নিয়ে গেছে এ চক্র।বাড়িটি দখলের সময় ঘরের ভেতর পরিবারের সদস্যদের রেখেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।এছাড়া বর্তমানে যে বাড়িতে মেম্বার পরিবার বসবাস করেন ওই বাড়িটিও ভঙ্গাই মিস্ত্রি নামের একজনের ছিল।এটিও মেম্বার পরিবারের পূর্ব-পুরুষেরা কৌশলে দখলে নেন বলে জানা গেছে। হাশামপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, যার বাড়ি বা জমিজমার উপর রাহেল মেম্বারের কুনজর পড়েছে তার আর রক্ষা নেই। বিভিন্ন কৌশলে রাহেল এই জমির মালিক হয়ে যান। কেউ তার এই কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলেই চুরি ও ডাকাতির মামলায় ঢুকানোর ভয় দেখানো হয়।তার এই একখন্ড হাশামপুর গ্রামের ‘ম’ অধ্যক্ষের বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি জানান,তার একখন্ড জমি রাহেল মেম্বার কিনার জন্য বারবার চাপ প্রয়োগ করছিল।জমি বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি দেয় রাহেল।এর কয়েক দিন পর রাহেল মেম্বারের বাড়ি চুরি হয়েছে মর্মে ওই ব্যক্তির উপর থানায় অভিযোগ দেয় রাহেল। পরে পুলিশ এসে তাদের আটক করে অন্য মামলায় আসামী করে জেলে পাঠায়।এতে বাপ ছেলে এক মাস জেল হয়। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে,ওই গ্রামের শৌলেন্দ্র রাম মালাকারের ভাইদের মধ্যে বসতভিটা নিয়ে বিরোধ চলছিল, রাহেল মেম্বার তাদের বিরোধ মীমাংসার নামে হাত বাড়িয়ে দেন।এক পর্যায়ে গ্রাম্য শালিস-পঞ্চায়েত বসিয়ে তাকে ওই ভিটে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এতেও কাবু করতে না পেরে তৃতীয় পক্ষের একজনকে সাজানো মালিক বানিয়ে রাহেল মেম্বার রেজিস্ট্রি করে নেয় বাড়িটি।এ ব্যাপারে শৌলেন্দ্র রাম মালাকার বলেন,ভাইদের অংশের ভূমি আমার কাছে বিক্রি করে টাকা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিক্রিত ভূমি রেজিস্ট্রি করে সমজিয়ে দিতে তাল-বাহানা শুরু করে।তখন আব্দুল আজিজ (রাহেল মেম্বার) উদ্যোগী হয়ে এ বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে। রাহেল মেম্বার ও স্থানীয় গন্যমান্য মানুষের মাধ্যমে ফের কিছু টাকা পরিশোধ করেও জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে কালক্ষেপন করে।এ অবস্থায় বাপ-দাদার ভিটা রক্ষা করতে রাহেল মেম্বারের কাছে কিছু ফসলি জমি বিক্রি করে ভাইদের আরও টাকা দিয়ে তাদের অংশের বসত-ভিটা রেজিস্ট্রি করা হয়।
তখন ওই মেম্বার আমার ক্রয় করা বাড়ির কিছু অংশ কৌশলে রেজিস্ট্রি করে নেয়।শুধু তাই নয় বাড়ির আরও কিছু অংশ ভাইদের মাধ্যমে থেকে বহিরাগত রবি মল্লিকের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়। এইভাবে আমার খরিদা বসত-ভিটায় দখলদ্বারী বহাল করে মেম্বার।এ ঘটনায় মৌলভীবাজার আদালতে দেওয়ানী মামলা করা হলে ডকুমেন্ট বিবেচনায় আদালত সোলেনামার মাধ্যমে আমার সত্য আমাকে হস্তান্তর করেন।হাশামপুর গ্রামের বয়োজেষ্ট্য আব্দুল খালিক জানান,মেম্বার পরিবারের কৌশল ও জাল-জালিয়াতির শিকার হয়ে হাসামপুরের ৬/৭টা পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আমরা যেন তাকে মেম্বার বানিয়েছি মানুষের জমিজমা, বাড়িঘর গিলে খাওয়ার জন্য।বর্তমানে রাহেল মেম্বারের লো-লুপ দৃষ্টি পড়েছে একই গ্রামের এক সাংবাদিক পরিবারের জমির উপর।ভুক্তভোগী সাপ্তাহিক পূর্বদিক পত্রিকার সম্পাদক মুজাহিদ আহমদ বলেন, রাহেল মেম্বার আমাদের পরিবারকে হেনস্তা করে আসছে অনেকদিন ধরে। বর্তমানে যে জমি নিয়ে রাহেল মেম্বার সমস্যা সৃষ্টি করেছে ওই জমি আমাদের পরিবার ১৯৬২ ও ৬৪ সালে খরিদাসূত্রে মালিক।
এই দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ভোগদখল করে আসছি। ওই জায়গার উপর লোভের দৃষ্টি পড়েছে রাহেল মেম্বারের।প্রথমে সে একটা পক্ষ তৈরি করে আমাদের বিরুদ্ধে।পরে শালিসের নামে এই জমি তাকে দেওয়ার প্রস্তাব করে।আমরা তাকে এই জায়গা দিতে অস্বীকার করি।পরে তার সৃষ্ট পক্ষ দিয়ে স্যাটেলম্যান্টের ৩০ ধারা ও ৩১ ধারায় আমাদের জমিতে আপত্তি দেন।বিজ্ঞ বিচারক আমাদের কাগজপত্র দেখে রায় আমাদের পক্ষে দেন।সর্বশেষ প্রিন্ট ফরছাও আমাদের পক্ষে আসে।বর্তমানে সে আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে চলেছে।ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেল তাঁর বিরুদ্ধে জাল দলিল ও অনিয়মের বিষয়টি অভিযোগ করে বলেন,আমি যখন ছোট ৩য় শ্রেণী পড়ি সেই সময় সাংবাদিক মুজাহিদের বাবার কিছু জায়গা আমার পিতার সাথে জমি বিনিময় হয়েছিলো। তখনকার বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। তিনি বলেন, শৈলেন্দ্র মালাকারের জায়গা কিছু দিন আমার কাছে ছিল। পরবর্তীতে দলিল করে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন,সামনে ইউপি নির্বাচন তাই আমার বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ চক্রান্ত করে এসব কুৎসা রটাচ্ছে।