পথচারীদের ডেকে এনে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করছেন। রাস্তার পাশে কিংবা উন্মুক্ত স্থানে টেবিল-চেয়ার পেতে বসেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কোন উপসর্গ নেই তাই শুরুতে অনেকে নমুনা দিতে চান না। কিন্তু নাছোরবান্দা স্বাস্থ্যকর্মীদের পীড়াপীড়িতে নমুনা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনেকে বিস্মিত। কারণ, তাঁদের অনেকেই করোনা পজিটিভ।
এ ভাবে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার পর উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেল উত্তরের সীমান্ত জেলা নওগাঁয়। গত রোববার থেকে মঙ্গলবার এই তিন দিনে ১১টি উপজেলায় ১ হাজার ৮৩২ জনের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। পরীক্ষায় ১৬৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই উপসর্গবিহীন ছিলেন।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ বলেন, সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার পরও নমুনা দিতে মানুষের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছিল না। ৩০ লাখ জনসংখ্যার এই জেলায় প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহ বুথে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ নমুনা সংগ্রহ হচ্ছিল এবং এখনো এই পরিস্থিতি। এ অবস্থায় জেলার করোনা পরিস্থিতি বোঝা বেশ মুশকিল হয়ে ওঠে। তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার বেশি, ওই সব এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে ক্যাম্প করে মানুষের করোনা পরীক্ষা করাবেন। সে অনুযায়ী নওগাঁ সদরসহ ১১টি উপজেলায় উন্মুক্ত স্থানে ক্যাম্প করে মানুষকে বুঝিয়ে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তাঁদের নমুনার র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াকে আমরা বলছি দ্বৈবচয়ন পদ্ধতি।’
ডেপুটি সিভিল সার্জন আরও বলেন, যাঁরা এভাবে নমুনা দিয়েছেন, তাঁদের জোরাজুরি করে, একপ্রকার ধরে এনে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়েছে। পরীক্ষায় যাঁদের পজিটিভ এসেছে, তাঁদের অনেকেই নমুনা দিতে চাননি। কিন্তু যখন ফলাফল পান, তখন বিস্মিত হন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত রোববার উন্মুক্ত স্থানে ক্যাম্পে চলতি পথের মানুষকে ডেকে এনে ১ হাজার ১০৮ জনের নমুনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ৯৫ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। তাতে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পরদিন সোমবার একই প্রক্রিয়ায় ৪৭২ জনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ। গত মঙ্গলবার দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ২৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল বারী বলেন, জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে কত শতাংশ আক্রান্ত, তাঁর সঠিক সংখ্যা বড় পরিসরে পরীক্ষা না করে বলা মুশকিল। তবে তিন দিনের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় যে চিত্র পাওয়া গেছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।