করোনা আক্রান্ত শ্বশুরকে পিঠে করে হাসপাতাল নিয়ে গেলেন ভারতের আসাম রাজ্যের এক নারী। রাজ্যের নওগাঁ জেলার বাসিন্দা ওই নারীর নাম নীহারিকা দাস। শ্বশুরকে পিঠে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নীহারিকা দাসের এই ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আসামের অভিনেত্রী থেকে বিহার-মুম্বাই-চেন্নাইয়ের অনেক মানুষ প্রশংসা করছেন এই নীহারিকার। কিন্তু জনপ্রিয়তা, ভাইরাল হওয়া, মানুষের কুর্নিশে আপাতত পাত্তা দেয়ার অবস্থায় নেই, কারণ নিজেও কোভিডে আক্রান্ত নীহারিকা।
জানা গেছে, কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকেন স্বামী সুরুজ। জেলার ভাটিগাঁওয়ের বাড়িতে ৭৫ বছর বয়সী শ্বশুর থুলেশ্বরের দেখভাল, সংসার সামলানো সব কাজ করেন নীহারিকাই একাই।
শ্বশুরের জ্বর ও কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয়ায় পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকের সাহায্য চেয়েও পাননি। তাই পিঠে করেই তিনি রওনা হন স্থানীয় রাহা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে থুলেশ্বরের কোভিড ধরা পড়ে। কোভিড ধরা পড়ে তারও।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে থুলেশ্বরকে হাসপাতাল ও নীহারিকাকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু অসহায় শ্বশুরকে একা ছাড়তে রাজি হননি নীহারিকা। বসে থাকেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। শেষ পর্যন্ত দুজনকেই অ্যাম্বুলেন্সে ভোগেশ্বর ফুকনানি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এক চিকিৎসক।
হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ড থেকে নিয়ম করে এসে আইসিইউতে ভর্তি শ্বশুরের সেবা করছিলেন নীহারিকা। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। কখনও পুত্রবধূ শ্বশুরের কপালে চুমু খেয়ে সাহস দেন। কখনও মজা করেন।
কখনও বলেন, ‘এটা আইসিইউ দেউতা (বাবা), ভয় পাবেন না। বুড়ো হয়ে ঢুকেছেন, ডেকা (যুবক) হয়ে বেরোবেন।’ কখনও বলতে শোনা যায়, ‘দেউতা আপনার কোনো চিন্তা নেই। কাঁদবেন না একদম। আমি তো আছি আপনার ভরসা। আর আমার আছেন আপনি।’
কিন্তু অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় শনিবার তাকে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। আসতে পারেননি নীহারিকা। তিনি ভিডিও বার্তায় হাতজোড় করে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, শ্বশুরের রক্ত লাগবে শুনছি। তার পাশে কেউ নেই। আমার নিজের শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। শক্তি শেষ হয়ে আসছে। দয়া করে আমায় গুয়াহাটির একই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। না হলে শ্বশুরকে সাহায্যের কেউ থাকবে না।’
Leave a Reply