ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
তিন মেয়েকেও নারী পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেন মা
অনলাইন ডেস্ক

সন্তানদের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা অকৃত্রিম। সহজাত এক বন্ধনের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক অটুট থাকে। আমৃত্যু স্নেহের পরশ নিয়ে সন্তানকে আগলে রাখেন মা-বাবা। আবার সন্তানকে অন্ধকারের পথে ঠেলে দেওয়ার মতো ভয়ংকর নজিরও সামনে আসছে। যার উদাহরণ যশোরের অভয়নগর উপজেলার সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা। নিজের তিন মেয়েকে তিনি তুলে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের হাতে। তাদের একজন আবার অপ্রাপ্তবয়স্ক। করুণ পরিণতি জেনেও সন্তানদের এ পথে ঠেলে দিতে এতটুকু বুক কাঁপেনি তার। সাহিদার দুই সন্তান এখন রয়েছে বেঙ্গালুরুতে। আরেকজন দেশেই আছে। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, প্রথম ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে এক তরুণীকে কয়েকজন যুবক ও এক নারী মিলে প্রচণ্ড মারধর করতে দেখা যায়। সেখানে লাল জামা ও জিন্স পরিহিত এক নারী টিকটক হৃদয় এবং তার কয়েকজন বন্ধুসহ পৈশাচিক ববর্রতা চালায়। নির্যাতনে অংশ নেওয়া লাল পোশাক পরিহিত মেয়েটি সাহিদা বেগমের। সে নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। সাহিদা তার মেয়েদের যেভাবে খারাপ পথে নামিয়েছেন, সেটা কল্পনাতীত।

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল থেকে নারী পাচার চক্রের মূলহোতা আশরাফুল ইসলাম, তার অন্যতম সহযোগী সাহিদা বেগম, ইসমাইল সরদার এবং আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এখন পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, টিকটক মডেল ও বিদেশে ভালো বেতনে চাকরি এবং প্রেমের ফাঁদে ফেলে একটি চক্র দীর্ঘদিন বাংলাদেশ থেকে নারী পাচার করে আসছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েদের নিয়ে তারা প্রথমে সীমান্ত এলাকায় জড়ো করে। সেখানে পাচারকারীদের ‘সেফ হোম’ রয়েছে। যশোর সীমান্তে সাহিদারও রয়েছে একাধিক ‘সেফ হোম’। পাচারের জন্য টার্গেট করা মেয়েদের সেখানে নিয়ে সাহিদা ও তার চক্রের সদস্যরা তাদের মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে তোলেন। কারও কারও ওপর চালানো হয় নির্যাতন।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, সাহিদা চারটি বিয়ে করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মেয়েদের পাচার করে বেঙ্গালুরুতে রাফি নামে এক ব্যক্তির কাছে পাঠাতেন। এর বিনিময়ে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা পান। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় নিজেও একটি গ্রুপ চালান।

এদিকে, পুলিশ এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে টিকটক হৃদয় চক্রের তিনজনকে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের। তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার এ তিনজনের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া কিছু ডায়েরি ও খাতা জব্দ হয়েছে। কারা, কীভাবে নারী পাচার চক্রে জড়িত, সেখানে এ সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য আছে।

পুলিশের অপর একজন কর্মকর্তা জানান, চক্রটি সামনে আসার পর নিখোঁজ আরও একাধিক তরুণীর পরিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের সন্তান কোথায়, কীভাবে রয়েছেন তার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান তারা। এমনকি বেঙ্গালুরু থেকে পালিয়ে আসা আরও কয়েকটি মেয়ের খোঁজ মিলেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে চক্রটির ব্যাপারে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বৈধ-অবৈধ উভয় পথেই নারীদের সীমান্ত পার করানো হতো। তারা কয়েকটি ধাপে পাচারের কাজটি করত। প্রথমে নারীদের বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, সাতক্ষীরা বা ঝিনাইদহে নিয়ে যেত। সেখানে সীমান্তের কাছাকাছি বিভিন্ন সেফ হোমে রাখা হতো তাদের। এরপর সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে তাদের সীমান্ত পার করানো হতো। পরের ধাপে চক্রের ভারতীয় এজেন্টরা তাদের গ্রহণ করে ওপারের কোনো সেফ হাউসে রাখত। সুত্র সমকাল

2 responses to “তিন মেয়েকেও নারী পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেন মা”

  1. … [Trackback]

    […] Read More on that Topic: doinikdak.com/news/22127 […]

  2. … [Trackback]

    […] Info on that Topic: doinikdak.com/news/22127 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x