ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন
বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে যৌন নির্যাতনের ভিডিও দেখে দেশে বাবার মামলা
Reporter Name

সম্প্রতি ভারতে এক তরুণীকে যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

ভিডিও দেখে নিজের মেয়েকে শনাক্ত করে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচারের মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা।

মামলায় মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা দেয়া হয়েছে। রাতে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। এখন আমরা তদন্ত শুরু করবো এবং ভুক্তভোগীকে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। এছাড়া আসামিদের ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মামলার এজাহারে ভুক্তভোগীর বাবা জানান, তিনি মগবাজার এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন। তার মেয়ের ৬-৭ বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী ৩ বছর ধরে কুয়েতে থাকেন। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকে তিনি (ভুক্তভোগী) বাবা ও শ্বশুরবাড়ি উভয় জায়গায় থাকতেন। ১৫ মাস আগে বাবাকে জানান, তিনি (ভুক্তভোগী) দুবাই যাবেন। বাবা তাকে বারণ করেন। তবে ১ বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন, মগবাজারের রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় তাকে (মেয়েকে) ফুসলিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে পাচার করেন। কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীর বাবা জানতে পারেন, মেয়েটি হৃদয়ের সঙ্গে ভারতে আছেন। তবে সম্প্রতি ভিডিওটি দেখে তিনি নিজের মেয়েকে চিনতে পারেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতে নিয়ে গিয়ে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে এক মেয়েসহ তিন-চারজন ভুক্তভোগীর হাত-পা-মুখ চেপে ধরে অমানুষিক যৌন নির্যাতন ভুক্তভোগীর হাত-পা-মুখ চেপে ধরে অমানুষিক যৌন নির্যাতন করে।

সম্প্রতি ফেসবুকে ওই তরুণীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে ৩-৪ জন যুবক শারীরিক ও বিকৃতভাবে যৌন নির্যাতন করছে। ভিডিওটি ধারণ করা হয় ভারতে। ওই ভিডিওতে থাকা যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে ঢাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ফেসবুক আইডি তদন্ত করে তার আসল নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ।

এরপর তার মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন, ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছেন। এছাড়া হাতিরঝিলের মগবাজারের স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করে। স্থানীয়ভাবে তিনি টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। তার বয়স ২৬ বছর।

তিনি বলেন, টিকটক হৃদয়ের মা ও মামা পুলিশকে জানায়, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে বাসার কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না।

ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, কৌশলে টিকটক হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে হৃদয়ের ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তখন সে জানায়, গত তিন মাস আগে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটে ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে।

হৃদয় আরও জানান, ভিডিওর ভুক্তভোগী একজন বাংলাদেশি তরুণী। তার বয়স ২০-২২ বছর হবে। ঢাকায় তার বাসা। ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভুক্তভোগীর একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায়।

হৃদয় জানান, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয় ও তার কয়েকজন বন্ধু জড়িত ছিল। ঘটনাটি ঘটে ভারতের কেরালায়। ওই ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল বলে জানান তিনি।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, হৃদয়ের দেয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পেয়েছি। পরিবার তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়েরকৃত একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে।

ডিএমপির এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হৃদয় বর্তমানে ভারতের পুনেতে অবস্থান করছে জানালেও তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্তের পাশাপাশি সে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। হৃদয়ের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যারা যৌন নির্যাতনে অংশগ্রহণ করেছে তাদের পরিচয়ও শনাক্তের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশি না ভারতীয় নাগরিক তা যাচাই চলছে।

ভারতে যেহেতু ঘটনাটি ঘটেছে সেক্ষেত্রে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা দীর্ঘ সাপেক্ষ। ভারতীয় পুলিশের কাছে যোগাযোগ করা হয়েছে কি-না এই প্রশ্নে ডিএমপির কর্মকর্তা বলেন, মেয়েটিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার স্থায়ী ঠিকানা শনাক্ত করা হয়েছে। তার বাবা-মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরবর্তীতে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরে আমরা দ্রুত মেয়েটিকে ফেরত এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি শহিদুল্লাহ আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে এরা একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। যারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অসহায় ও বিদেশে গমনে ইচ্ছুক নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করতো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেয়েটিকে উদ্ধার ও যারা তাকে যৌন নির্যাতন করেছে তাদেরকে ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণীর স্বামী কুয়েতে থাকেন। ২০১৪ সালে তাদের প্রেম করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তরুণীর শ্বশুরবাড়ির লোকদের অত্যাচার সহ্য করতে হত। সেই কারণে তরুণী বিয়ের প্রায় পাঁচ বছর পর পর্যন্ত বাবার বাড়িতে থাকেন।

বাবার আর্থিক অনাটনের কথা চিন্তা করে তরুণী সৌদি আরব যাওয়ার চিন্তা করেন। তার বাবা এক দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠাতে গিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ধরা খান। এরপর ওই তরুণী কাউকে কিছু না জানিয়ে ভারত চলে যান।

One response to “বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে যৌন নির্যাতনের ভিডিও দেখে দেশে বাবার মামলা”

  1. … [Trackback]

    […] Read More Info here on that Topic: doinikdak.com/news/19207 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x