– ভাস্কর সরকার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিদায়ী উপাচার্য এম আবদুস সোবহান সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ১৩৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। এই অনিয়মে জড়িতদের খুঁজে বের করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
অনেক আগে থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহকভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করা হয় জানিয়ে মুহাম্মদ আলগীর বলেন, ‘২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বলেছে যে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি সুনির্দিষ্ট পদ থাকে এবং সেই পদের বিপরীতে যদি অনুমোদন থাকে, সেখানে অর্থ বরাদ্দ থাকে, তাহলে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে। অস্থায়ী বা অ্যাডহকভিত্তিকে নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনে অবৈধভাবে আবদুস সোবহান নিয়োগ দিয়েছেন বলে মনে করেন এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোপূর্বে উপাচার্যের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকটি পরিপত্রে সেখানে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর উপাচার্য সেই সময়ে চলমান সব নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার মানে উনি সেই পরিপত্র মেনে নিয়েছিলেন। তাহলে তিনি হঠাৎ করে কীভাবে আবার তার কার্যদিবসের শেষ দিনে এতজনকে অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ করেন? তিনি সম্পূর্ণরূপে অবৈধ এবং নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছেন।’
ড. মুহাম্মদ আলমগীর আরও বলেন, ‘যে নিয়োগগুলো তিনি (আবদুস সোবহান) বিভিন্ন বিভাগে দিয়েছেন, সেখানে বিভাগীয় উন্নয়ন কমিটির কোনো সুপারিশ ছিল না। তার মানে তার এসব নিয়োগ অবৈধ।’
এর আগে গত ৬ মে আবদুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ দিন ১৩৮ জনকে নিয়োগ দেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। যদিও গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটির সদস্যরা ১৩৮ জনকে নিয়োগের প্রমাণ পেয়েছেন। এছাড়া ১২৯ জনকে সিভি ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৷
গত ৬ মে গঠিত হয় চার সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি। পরে ৮ মে তদন্ত কমিটির সদস্যরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। সেদিন এম আবদুস সোবহান, তার জামাতা আইবিএ’র প্রভাষক এ টি এম শাহেদ পারভেজ, উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়া, রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ, তিনজন সহকারী রেজিস্ট্রার, সংগীত বিভাগের সভাপতি ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের সাতজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
ওই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষা এবং গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। আমরা চেয়েছি স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রনালয়ে জমা দিতে পারি। এর জন্য আমরা এর সাথে সকলের সঙ্গে কথা বলেছি, সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আমরা বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিব। আশা করি নিদিষ্ট সময় আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারব।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান এম আবদুস সোবহান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে-জামাতাকে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।