করোনায় আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন পাসপোর্টের আবেদন করা হয়েছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নতুন পাসপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এমআরপি পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক হলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তাকে বিনা ফিঙ্গার প্রিন্ট ও স্বাক্ষরে নতুন পাসপোর্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তার পক্ষে আবেদন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তিনি দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট পাবেন’।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হয়ে যায়। তাই তার নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট ফিও জমা দেওয়া হয়েছে। আর এই বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে বলা হয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে তার পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, কবে ম্যাডামের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। এই বিষয়গুলো তার পরিবার ভালো বলতে পারবে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া যেকোনো দিন বিদেশে যাচ্ছেন বলে গতকাল সারা দেশে আলোচনা চলছিল। সরকার অনুমতি দিলে করোনায় পরবর্তী জটিলতার উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি যেকোনো দিন লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুরে যাবেন।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে এরই মধ্যে সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে তাঁর পরিবার। সরকারও বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবার জানিয়েছে তাঁর বিদেশে চিকিৎসা করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অত্যন্ত মানবিক। আমরা আবেদনটি ইতিবাচকভাবে দেখছি। ইতিবাচকভাবে দেখছি বলেই দণ্ড স্থগিত করে তার পছন্দমতো জায়গায় চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আইনে যে পর্যায়ে আছে কীভাবে কী করা যেতে পারে সেজন্য আবেদন আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত আসলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, ‘খালেদা জিয়ার আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেদিন তার বাসভবন ফিরোজায় আরো ৮ জন ব্যক্তিগত স্টাফও করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় খালেদা জিয়ার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে।
পরে গত সোমবার (৩ মে) সকালের দিকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে তাঁর সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাঁকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে সরকার শর্তসাপেক্ষে এই মুক্তির আদেশ দেয়। এই আদেশে গত বছর ২৫ মার্চ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তিনি রাজধানীর গুলশান এভিনিউয়ের নিজের বাসভবন ফিরোজায় যান। এরই মধ্যে তাঁর মুক্তির মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়েছে।
Quality articles or reviews is the key to interest the visitors to
visit the web site, that’s what this web site is providing.