আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, জীবন-মৃত্যুর মালিক মহান আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে আল্লাহর ঘর মসজিদে বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় অবস্থান করাই ই’তিকাফ। এর মাধ্যমে মুমিনের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়ে দুনিয়ার লোভ-লালসায় ছেদ পড়ে, আত্নিক উন্নতি অনুভূত হয়।
ই’তিকাফের সবথেকে বেশি উপযোগী সময় রমযানের শেষ ১০ দিন (গতকাল সোমবার আসরের পর থেকে শুরু হয়েছে)। মানব জীবনে যত ধরনের ফজিলতপূর্ণ ইবাদত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ই’তিকাফ অন্যতম।
মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদতের জন্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন: আমি মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমারই ইবাদতের জন্য [ সূরা জারিয়াত, আয়াত ৫৬]। আর ই’তিকাফের মাধ্যমেই একজন খাটি মুমিন নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর সীমানায় বেঁধে নেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চই ফেরেশতগণ তোমাদের একজনের জন্য দু’আ করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা(ফেরেশতাগণ) বলতে থাকেন, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে,তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতাগণ তার জন্য এভাবে দু’আ করতে থাকবে।[সহীহ মুসলিম (হাদিসের দ্বিতীয় বিশুদ্ধ গ্রন্থ), হাদিস নং৬০১১]
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ার এক অন্যন্য মাধ্যম ই’তিকাফ। বান্দাহ যখন সমস্ত সৃষ্টিজীব থেকে পৃথক হয়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে তখন বান্দাহ’র অন্তরে এক আল্লাহর স্মরণ, তাঁকে ভালোবাসা, তাঁর ইবাদতে মনোনিবেশ করার চরম তৃপ্তি অনূভুত হয়।
সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে ই’তিকাফের সর্বনিম্ন সময় হলো এক দিন এক রাত। তবে দশ দিন অবস্থানের ফলে মুমিনের অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়। যেকারনে এর উপকারিতা ব্যাপক। হাদিসে এসেছে, মহান আল্লাহ আরশের ছায়ার নিচে সাত ব্যক্তিকে ছায়া দান করবেন তার মধ্যে অন্যতম হলেন, এবং ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে বাাঁধা। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬২০]
আর এমন ই’তিকাফ তখনই হবে যখন বান্দাহ মসজিদে অবস্থান করে কথা কম বলবে, কম ঘুমাবে, ইবাদতের সময়কে সুব্যবহার করবে।
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা- ইয়া রাহমান, ইয়া রাহীম, ইয়া গাফুর, ইয়া গাফফার রমযানের রোজার উসিলায় আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, পবিত্র কুরআনের আলো দ্বারা আমাদের অন্তরকে আলোকিত করে দেন, রমজান মাসের রহমত, মাগফিরাত, নাযাত আমাদের নসীব করুন। আল্লাহ উপর্যুক্ত বিধান মেনে আমাদের ই’তিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমী
Leave a Reply