ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন
সম্রাটদের ভুবনে স্বাগত
Reporter Name

এক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। আমরা মুখে বলছি, সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা পেছনের দিকে হাঁটছি। অন্তত বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার বর্তমান প্রবণতা সে কথাই বলছে।

বৈশ্বিক রাজনীতির ‘মোড়ল’ থেকে শুরু করে ‘পাতি’ দেশের নেতারাও এখন আর নিছক শাসক থাকতে চাইছেন না। তাঁদের ঝোঁক ‘সম্রাট’ হওয়ার দিকে। বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁদের সুখ নেই। তাঁরা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ‘জাহাঁপনা’ হতে মরিয়া। প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে উঠে তাঁরা রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হতে চান। তাঁরা যা বলবেন, যা করবেন, সবাই তা ‘জো হুকুম জাহাঁপনা’ বলে মেনে নেবেন।

ইতিমধ্যে বিশ্ব কয়েকজন পরাক্রমশালী সম্রাটের দেখা পেয়ে গেছে। তাঁরা প্রথাগত সম্রাট নন। এই শাসকরূপী সম্রাটদের তালিকায় আছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো প্রমুখ। সবশেষ সম্রাট হওয়ার পথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্সনতুন জার
রাশিয়ায় নতুন ‘জার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ২০০০ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্টের মোড়কে ক্ষমতায় আছেন পুতিন। গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘বিপুল’ বিজয়ের মধ্য দিয়ে আরও ছয় বছরের জন্য ক্ষমতা পোক্ত করেছেন তিনি। ২০২৪ সালে পুতিন কী করবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকেরই ভবিষ্যদ্বাণী—বয়স হলেও সহজে ক্ষমতা ছাড়ার লোক নন পুতিন। চলতি মেয়াদ শেষে কী করবেন, তা যে পুতিনের মনমর্জির ওপর নির্ভর করছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পুতিন ইতিমধ্যে যা করার করে ফেলেছেন। রাশিয়ার সর্বস্তরে তাঁর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব। এই মুহূর্তে ক্রেমলিনে পুতিনের বিকল্প কেউ নেই। তাঁর কথার বাইরে পাতাও নড়ে না।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। ছবি: রয়টার্সমাও নম্বর টু
গুঞ্জনটা আগেই অল্পস্বল্প ছড়িয়ে ছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে তার বাস্তব রূপ দেখা গেল। চীনের শাসনতন্ত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখল বিশ্ব। দেশটির সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদ তুলে দেওয়া হয়। ফলে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ‘চমৎকার’ বন্দোবস্ত হয়েছে। চীন ফিরেছে একনায়কত্বে। সি এখন সবকিছুর চেয়ারম্যান। চিরকালীন চেয়ারম্যান। চীনা বিপ্লবের নেতা মাও সে তুংয়ের পর দেশটি সির মতো ক্ষমতাধর নেতা আর দেখেনি। তাই অনেকেই সিকে চেয়ারম্যান ‘মাও নম্বর টু’ বলে অভিহিত করছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি: রয়টার্সঅটোমান সুলতান
তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান যেন এক পরাক্রমশালী অটোমান সুলতান। সম্প্রতি তিনি প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তাঁর সামনে আজীবন ক্ষমতায় থাকার হাতছানি। সঙ্গে অসীম ক্ষমতা। গত বছরই সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছেন তিনি। এবার সেই ক্ষমতা প্রয়োগের পালা। নতুন সংবিধান অনুযায়ী তিনিই সরকারপ্রধান, তিনিই রাষ্ট্রপ্রধান। এরদোয়ানের এবারকার রাজত্বে প্রধানমন্ত্রী পদ নেই। তিনি মন্ত্রী, বিচারক নিয়োগ দেবেন। প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়োগও তাঁর হাতে। কারও কাছে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে না। বরং অন্যরাই তাঁর কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। সামান্যতম হেরফের হলে পরিণতি যে কী হবে, তা ইতিমধ্যে তুর্কিরা দেখতে শুরু করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্সআসছেন মার্কিন সম্রাট
মার্কিন সাম্রাজ্যের কথা এত দিন আমরা শুনে এসেছি। কিন্তু কোনো সম্রাট দেখিনি। এবার প্রেসিডেন্ট-শাসিত যুক্তরাষ্ট্র একজন সম্রাট পেতে যাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। তিনি মার্কিন গণতন্ত্রের বারোটা আগেই বাজিয়েছেন। গণমাধ্যমকে জনগণের কাছে আস্থাহীন করে তুলেছেন। কায়দা করে রিপাবলিকান পার্টি, হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাকি ছিল বিচারব্যবস্থা। তাও ট্রাম্পের পকেটে নেওয়ার সব আয়োজন সারা। এবার ট্রাম্পকে ঠেকায় কে?

পুতিন, সি, এরদোয়ান, ট্রাম্পের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছেন মিসরের সিসি, ভেনেজুয়েলার মাদুরো। হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, সার্বিয়ার নেতাদের নামও বাদ দেওয়ার উপায় নেই। ফিলিপাইনের দুতার্তের মনেও সম্রাট হওয়ার শখ। সামনের দিনে এই তালিকা হয়তো আরও দীর্ঘ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x