ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
পাথরঘাটায় সরকারি উদ্যোগে কেওড়া ফলকে নিয়ে গড়ে উঠতে পারে নতুন শিল্প
পাথরঘাটা বরগুনা প্রতিনিধি

‘কেওড়া’ ফল এই নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে জন্মায়। সরকারি উদ্যোগে এই ফলটিকে নিয়ে গড়ে উঠতে পারে নতুন একটি শিল্প।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিশখালী নদীর তীরে বৃক্ষরাজির মধ্যে বেশিরভাগই কেওড়া গাছ । উপকূলীয় এলাকায় এই ম্যানগ্রোভ গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে থাকে। এ গাছের আসল নাম সােন্নেরাতিয়া আপিতালা । বনাঞ্চলের উঁচু গাছ হিসেবে এগুলাে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন রক্ষা করে , তেমনি উপকূলকে ঝড় , বন্যা ও জলােচ্ছ্বাস থেকে বাঁচাতে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে ।

লবণসহিষ্ণু এ গাছে বছরের জুন থেকে অক্টোবর মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে টক জাতীয় এক ধরনের ফল ধরে। ফলটি উপকূলবাসীর কাছে কেওড়া ফল নামে পরিচিত । বিভিন্ন বন্য প্রাণীর বিশেষ করে বানরের প্রিয় খাবার এটি । শুধু বন্য প্রাণীর কাছেই নয় , এখানকার মানুষের কাছেও ফলটি অতি জনপ্রিয় ।

সরেজমিনে কয়েকটি কেওড়া বন ঘুরে দেখা যায় , অধিকাংশ গাছেই এখন ঝুলছে কেওড়া ফল। ফলটি সবুজ রঙের এবং প্রায় গােলাকৃতির । প্রত্যেকটি ফলের ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার । ভেতরে বেশ বড় বিচি । একেকটি বিচিতে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫টি ।

বন্য প্রাণীর পাশাপাশি মানুষও উপকারী হিসেবে এ ফল নানাভাবে খেয়ে থাকে । ফলটির ওপরের সবুজ রঙের মাংসল অংশটুকু টক স্বাদের । টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় কাঁচা ফল লবণ দিয়ে খাওয়া যায় । এছাড়া সিদ্ধ করে , তরকারি রান্না করে বিভিন্ন স্বাদের আচার ও চাটনি তৈরিসহ নানাভাবে খাওয়া যায় । তাছাড়া মাছের খাবার হিসেবেও পঁচা কেওড়া ব্যবহার করা যায় ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে , কেওড়া ফলে প্রায় ১২ শতাংশ শর্করা , ৪ শতাংশ আমিষ , ১.৫ শতাংশ ফ্যাট , প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ; বিশেষত ভিটামিন সি এবং এর ডেরিভেটিভ রয়েছে ।

এছাড়া এ ফল পলিফেনল , ফ্লাভানয়েড , অ্যান্থােসায়ানিন , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আনস্যাচুরেটেড ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড , বিশেষ করে লিনােলেয়িক অ্যাসিডে পরিপূর্ণ । ফলটিতে চায়ের মতাে ক্যাটেকিনসহ বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল রয়েছে প্রচুর পরিমাণে । আমাদের দেশে প্রাপ্ত ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিফেনল রয়েছে আমলকিতে , তারপরই কেওড়া ফলের অবস্থান । পলিফেনল শরীরে ডায়াবেটিস , ক্যান্সার , আর্থারাইটিস , হৃদরােগ , এলার্জি , চোখের ছানি এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহসহ প্রভৃতি রােগ সৃষ্টিতে বাঁধা প্রদান করে ।

ফলটিতে আমলকি , আপেল ও কমলার তুলনায় বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম , আয়রন , ক্যালসিয়াম , ফসফরাস , ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক রয়েছে । এ ফলের রয়েছে ডায়রিয়া , আমাশয় ও পেটের পীড়ার জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াকে দমনের এক কার্যকরী ক্ষমতা । তাছাড়া ফলটিতে প্রচুর পরিমাণ পালমিটিক অ্যাসিড , অ্যাস্করবাইল পালমিটেট ও স্টিয়ারিক অ্যাসিড রয়েছে ; যা খাদ্যশিল্পে খাদ্য পক্রিয়াকরণে এবং তৈরি খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয় ।

x