ঢাকা, রবিবার ১৯ মে ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কপিলমুনির কৃষকরা
মোঃ মনিরুল ইসলাম, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি

কপিলমুনিতে নেপিয়ার ঘাস চাষের প্রতি ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেকেই এখন এ ঘাস চাষ করে নিজের গবাদি পশুর প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি অংশ বাজারে বিক্রি করছেন। আর এতে করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা।

কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়ন সহ তালা উপজেলাধীন জালালপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়- নেপিয়ার ঘাস নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা। নির্ধারিত সময়ে জমি থেকে ঘাস কেটে কেউ কাঁধে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন আবার কেউ আঁটি বেঁধে ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রির জন্য বাজারে চলে যাচ্ছেন। অনেক চাষি পাইকারিও বিক্রি করে এ ঘাস। চাষিরা জানিয়েছেন- নেপিয়ার ঘাস চাষে পরিশ্রম কম। এ ঘাসের চারা একবার জমিতে লাগালে ৩ বছরের মধ্যে নতুন করে লাগানো লাগে না। এজন্য চাষিরা এ ঘাস গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য জমিতে চাষ করছে। গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য হিসেবে এবং ভিটামিন ‘এ’ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ঘাসের চাহিদা এ অঞ্চলে দিনদিন বাড়ছে।

রেজাকপুর গ্রামের রিপন হোসেন জানান- তিনি পেশায় একজন কৃষক। চাষাবাদ ও গবাদি পশু পালন তার প্রধান আয়ের মাধ্যম। বাড়িতে তার ১০টি দুধের গাভী রয়েছে। এ গাভী প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ লিটার দুধ দেয়। ওই দুধ কাশিমনগর বাজারের ব্র্যাকে বিক্রি ও কৃষি কাজ করে তার সংসার খুব ভালোভাবেই চলে। এরই মাঝে বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন।

নিজের গবাদি পশুর চাহিদা মিটিয়ে এ ঘাসের অনেকটা অংশই তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এ থেকে তার সংসারে বাড়তি স্বচ্ছলতাও এসেছে। তালার কানাইদিয়া গ্রামের শহিদুল কাগজী  জানান, তিনি মূলত পেশায় একজন কৃষক । বাড়িতে ৩টি গবাদি পশু আছে। এসবের পাশাপাশি ১ বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস লাগিয়েছেন তিনি। নিজের গবাদি পশুগুলোকে খাওয়ানোর পাশাপাশি মাঝে মধ্যেই এই ঘাস বাজারে বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া অন্যের জমি থেকে নেপিয়ার ঘাস পাইকারি কিনে বিক্রি করে তার পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। নাছিরপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম আরও জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে এ ঘাসের চাহিদা অনেক। তিনি ভ্যান গাড়িতে করে পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে ঘুরেঘুরে ১০ টাকা আঁটি দরে এ নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করেন।

কপিলমুনি ইউনিয়নের বিরাশী গ্রামের মোঃ লিয়াকত আলী গাজী জানান- নেপিয়ার ঘাস চাষে অনেকেই আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এ ঘাস সহজ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় এবং পরিশ্রমও অনেক কম। কেবল মাঝে-মাঝে ক্ষেতের ভেতরে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। সব দিক দিয়ে লাভজনক হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এ জাতের ঘাস চাষ করে আসছেন।

কৃষকরা আরও জানান- শুরুতে নিজেদের গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই এই ঘাস চাষ শুরু করেন তারা। পরে বাড়তি অংশ বিক্রি করতে শুরু করেন। বর্তমানে পাইকগাছা উপজেলার অনেক অঞ্চলের কৃষকরাই তাদের দেখে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন। এ ঘাসের কয়েকজন ক্রেতা জানান- আগড়ঘাটা বাজার থেকে প্রতিদিনই সহজে এ ঘাস আমরা কিনতে পাই এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি। নেপিয়ার জাতের ঘাস গবাদি পশুর খাদ্য তালিকায় রেখে অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হয়। নেপিয়ার ঘাস চাষে কৃষকদের আগ্রহ প্রসঙ্গে কপিলমুনি ইউনিয়ন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা শেখ তোফায়েল আহম্মেদ তুহিন বলেন- নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ লাভজনক। স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয় এই ঘাস চাষে। কপিলমুনি অঞ্চলের অনেক চাষিই নেপিয়ার ঘাস বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। এছাড়া বর্তমানে এটা গৌ খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x